• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ রাত ০৮:৩৯:৫৬ (27-Jul-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ রাত ০৮:৩৯:৫৬ (27-Jul-2024)
  • - ৩৩° সে:

বার বার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলেও বিচার পাচ্ছেন না কুষ্টিয়ার সাংবাদিক সমাজ

ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় গত কয়েক বছরে সাংবাদিকদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় সাংবাদিকরা হতাহতের শিকার হলেও বিচার হয়নি কোনো ঘটনার। এমনকি একটি ঘটনায়ও আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি পুলিশ। ফলে হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে।সাংবাদিকরা বলছেন, বার বার হামলা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। বিচারহীনতার কারণে দিন দিন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলছে।কুষ্টিয়ায় ২০২২ সালে খুন হয়েছেন দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। কিন্তু সেই মামলা প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ক্লুলেস মার্ডার হিসেবেই পুলিশের খাতায় বন্দি।চলতি বছর সর্বশেষ সাংবাদিকের ওপর বর্বর হামলার ঘটনা ঘটেছে গত ১৯ জুন। কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুর বাজারে এশিয়ান টিভির কুষ্টিয়ায় কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার ও স্থানীয় দৈনিক সত্য খবর পত্রিকার সম্পাদক হাসিবুর রহমান রিজুর ওপরে হামলা করে দুই হাত ও দুই পা ভেঙে শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত করে সন্ত্রাসীরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে জখম করে হাসিবুর রহমান রিজুকে।শুধু হামলা করেই থেমে থাকেনি সন্ত্রাসীরা, আশপাশে কাউকেই তাকে উদ্ধার করতে দেয়নি। র্দীর্ঘ সময় রাস্তার উপরে হাসিবুর রহমান রিজুকে ফেলে রাখে সন্ত্রাসীরা। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু এখনও ঢাকা ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন।হামলার পরের দিন সাংবাদিক রিজুর স্ত্রী টপি বিশ্বাস বাদী হয়ে ১৬ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দয়ের করেন। পুলিশ মামলার এজাহার নামীয় ১৫ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করে। এছাড়া অন্য কোনো আসামেকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি।এর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৩ তারিখ কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড় থেকে নিখোঁজ হন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচে গড়াই নদী থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৮ জুলাই রুবেলের দাফন শেষে কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের সাংবাদিকরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে কুষ্টিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই দিন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আজো পুলিশের খাতায় ক্লুলেস!চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চ্যানেল ২৪ ফোর এর স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাসকে অফিস থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে বালু সন্ত্রাসীরা। অপরদিকে পদ্মা নদীর মধ্যে এনটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াসমিন শ্যামলীকে স্পিড বোর্ড থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে বালু উত্তোলনকারী সন্ত্রাসীরা। তারা ক্যামেরা মোবাইল কেড়ে নিয়ে যায়। এসব ঘটনারও কোনো বিচার হয়নি।সর্বশেষ হামলার শিকার হাসিবুর রহমান রিজু। হামলার পরে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন থানা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। তারপরও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করেনি।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘প্রয়োজন হলে সামাজিকভাবে দণ্ড হোক, কিন্তু কোনো প্রকার খুনাখুনি হোক এটা কখনোই সমর্থন করি না। সাংবাদিক নির্যাতনকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’সাংবাদিকরা বলছেন, যশোরের দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলকে ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট যশোর বেজপাড়ায় বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুন হয়েছেন ১৯ জন সাংবাদিক। একটি হত্যারও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বেড়ে চলেছে সাংবাদিক নির্যাতন।কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ‘আন্দোলন করা হচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মিলন উল্লাহ বলেন, ‘যদি রুবেল হত্যার বিচার হতো তাহলে হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর এই ধরনের নির্মম হামলার কোনো ঘটনা ঘটতনা। কেন জানি কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা হলে আমরা লক্ষ করি পুলিশ কেন যেন নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থাকে।’কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) সাধারণ সম্পাদক ও জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, ‘হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর যে নির্মম হামলার ঘটনা চালানো হয়েছে, এই ঘটনার আমরা সিসি ফুটেজ দেখেছি। হামলাকারীরা হামলার পরে প্রায় আধা ঘণ্টা রাস্তায় ফেলে রাখে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং উপযুক্ত বিচার চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত হামলাকারীদের শাস্তি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আমাদের কণ্ঠরোধ করতে পারবে না।’বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজের) সহ-সভাপতি আফরোজা আক্তার ডিউ বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চেয়ে আমরা অসংখ্যবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মহাসমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু সাংবাদিক রুবেল হত্যাসহ বিভিন্ন সময় জেলায় কমরত সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় কোনো বিচায় হয়নি, এটি দুঃখজনক। বিচারহীনতার জন্যই বারবার সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।’এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কন্তি নাথ বলেন, ‘আসামিরা গ্রেফতারের ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত ছিলো। আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়। তাই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।’

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান