বাঞ্ছারামপুরে ট্রিপল মার্ডারের আসামি জহিরুল গ্রেফতার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চর ছয়ানি গ্রামে ঘরে ঢুকে সৌদি আরব প্রবাসী শাহ আলমের স্ত্রী জেকি আক্তার(৩৫), তার দুই পুত্র মাহিন(১৪) ও মহিন(৭)কে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনায় খুনি জহিরুল ইসলাম(২৫)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার একটি বাড়ি থেকে তাকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার জহিরুল ইসলাম নিহত জেকি আক্তারের বড় বোন শিল্পী আক্তারের মেয়ের জামাই এবং নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগিরচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।১৮ অক্টোবর বুধবার দুপুরে গ্রেফতার জহিরুল ইসলামকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাঞ্ছারামপুর আদালতের বিজ্ঞ বিচারক স্বাগত সৌম্যের আদালতে সোপর্দ করা হলে জহিরুল ইসলাম ত্রিপল খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন।বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস বিফ্রিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস্) মো. সোনাহর আলী শরীফ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত ডিসেম্বর মাসে জহিরুল ইসলাম নিহত জেকি আক্তারের বড় বোন শিল্পী আক্তারের কন্যা আনিকা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিলো। দাম্পত্য কলহের জের ধরে আনিকা আক্তার প্রায়ই তার বাবার বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবদী গ্রামে চলে আসতো। বর্তমানেও আনিকা তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছে। বড় বোন শিল্পী আক্তারের পরিবারে প্রভাব বিস্তার করতো নিহত জেকি আক্তার।দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সোমবার সকাল ৮টার দিকে খালা শ্বাশুড়ি জেকি আক্তারের বাসায় আসে জহিরুল ইসলাম। সেখানে নাস্তা খেয়ে সে চলে যায়। রাত সাড়ে রাত ৮টার দিকে জহিরুল ইসলাম পুনরায় জেকি আক্তারের বাড়িতে যায়। পরে জহিরুল জেকি আক্তারের কাছে তার শাশুড়ি (শিল্পী আক্তার) ও তার স্ত্রীর সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা শুরু করলে জেকি আক্তারের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জহিরুল ইসলাম ঘর থেকে বটি দা নিয়ে জেকি আক্তারকে মাথার পিছন দিকে ও ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে। জেকি আক্তারের চিৎকারে ঘুমিয়ে থাকা তার বড় ছেলে মাহিন মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে জহিরুল তাকেও কোপ দেয়। মাহিন দৌড় দিয়ে নিজ রুমে দরজা বন্ধ করার চেষ্টা ও চিৎকার শুরু করলে জহিরুল সেখানে গিয়ে গামছা দিয়ে মাহিনের মুখ বেঁধে ফেলে পরে তাকে টেনেহিচড়ে মায়ের পাশে এনে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে।এক সময় ছোট ছেলে মহিন ঘুম থেকে উঠে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলে মহিন তাকে চিনে ফেলতে পারে এইকথা চিন্তা করে মাহিনের শয়নকক্ষ থেকে একটি বাটাল এনে মহিনের দিকে তাকালে মহিন ভয়ে বাথরুমে চলে যায়। পরে জহিরুল বাথরুমে গিয়ে মহিনের কণ্ঠনালীতে বাটাল ঢুকিয়ে দেয় ও পরে তার মাথায় বাটাল ঢুকিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে বাথরুমে ফেলে রাখে। ঘুমিয়ে থাকা ৭ মাসের ওজিহা তাকে চিনতে পারবে না ভেবে জহিরুল তাকে খুন করেনি। পরে রাত ১টার দিকে জহিরুল জেকি আক্তারের ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়।প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. জয়নাল আবেদিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মো. সিরাজুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন, বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরে আলম উপস্থিত ছিলেন।প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ত্রিপল খুনের ঘটনায় নিহত জেকি আক্তারের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।উল্লেখ্য, ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চর ছয়ানি গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদি আরব প্রবাসী শাহ আলমের বাসার দরজা ভেঙ্গে তার স্ত্রী জেকি আক্তার দুই পুত্র মাহিন ও মহিনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় শাহআলমের ৭ মাস বয়সী কন্যা সন্তান ওজিহাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।