চৌদ্দগ্রামে স্বামীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীর মামলা, দেড় বছরের সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা
নিজস্ব প্রতিনিধি: এদেশে কিছু কিছু মাদকাসক্ত স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের অবর্ণনীয় অত্যাচার চালায়। আবার মাদক সেবন করে এসে স্ত্রীকেও মাদক সেবন করার জন্য জোরপূর্বক অত্যাচার ও নির্যাতন চালানোর ঘটনাও শুনা যায়। এক সময় আমরা এসব ঘটনায় ৯০ দশকের সিনেমায় যা দেখতে পেতাম। বর্তমানে প্রতিনিয়ত ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এমন ঘটনা ঘটছে।এই গ্রামগুলো বর্ডার সীমান্ত হওয়াতে প্রায় সময় দেখা যায়, গ্রামগুলোর বেশিরভাগ লোক মাদকের বড় বড় ডিলার এবং বাস্তবে এদের কারণে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে মাদক পাচার হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে অনায়াসে। আর রাতের বেলায় মাদক সেবন করে এসে স্ত্রীর প্রতি চলে জুলুম এবং অত্যাচার, যা বাংলা সিনেমার সেই ঘটনাকেও হার মানিয়ে ফেলবে।কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ১৩নং জগন্নাথ দিঘী ইউনিয়নের ভারত বাংলাদেশ বর্ডার সীমান্ত সাতঘরিয়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির হাফেজ ফয়েজ আহমেদের ছেলে জুবায়ের আহমেদের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রী ইসরাত জাহান রুবি অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী মাদকে আসক্ত এবং সাতঘরিয়া গ্রামের লোকেরা যাকে এক নামে চিনে মাদকের ডিলার জুবায়ের আহমেদ নামে। প্রথম স্ত্রীকে ফেনী উপজেলার শশ্যদি ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রাম থেকে বিয়ে করে আনার পর থেকে স্বামী জুবায়ের আহমেদ প্রতিনিয়ত মাদক সেবন করে এসে স্ত্রী ইসরাত জাহান রুবিকে প্রতি রাত্রে তার সাথে মাদক সেবন এবং উলঙ্গ হয়ে নাচার জন্য রেডি হয়ে আসতে বলেন। তার এসব খারাপ প্রস্তাবে স্ত্রী রাজি না হওয়াতে স্ত্রীর উপর চলতে থাকে অমানুষিক নির্যাতন-অত্যাচার। এক সময় তার উপর শারীরিক নির্যাতন করে তাকে বাধ্য করা হতো মাদক সেবন করতে এবং স্ত্রীর আত্মচিৎকারে আশেপাশের বাড়ির লোকজন এসে নীরবে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু কিছুই বলার সাহস পেতেন না তারা। কারণ জুবায়ের ছিল মাদকের ডিলার, অর্থ দিয়ে যে কোন কাজ করতে পারতো। আবার কখনো কখনো তাকে অর্থের জন্য চাপ দেওয়া হতো। এসব সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী ইসরাত জাহান রুবি তার পিতার বাড়ি চলে যান ফেনী জেলার শশ্যদি ইউনিয়নে।এ বিষয়ে বিস্তারিত তার পিতাকে জানানো হলে তার পিতা স্বামীর গ্রাম সাতঘড়িয়া গ্রামের গণ্যমান্য লোকদের সাথে যোগাযোগ করে দুই পক্ষের গণ্যমান্য লোকদের সম্মতিক্রমে সালিশি বৈঠক বসেন। সালিশি বৈঠকে জুবায়ের অপরাধী প্রমাণিত হয়ে প্রতিশ্রুতির দেন, উপস্থিত গণ্যমান্য লোকদেরকে দ্বিতীয়বার এসব ধরনের আর কোন ঘটনা হবে না এবং সে ভালো হয়ে যাবে।এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ভালো হয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দেওয়াতে সালিশি বৈঠকে লোকদের কথার ভিত্তিতে স্ত্রী ইসরাত জাহান রুবি স্বামী জুবায়ের আহমেদের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং স্ত্রী কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করেন স্বামীর কোন পরিবর্তন হয় নাই, সে আগের মতই প্রতিনিয়ত মাদক সেবন করে আসে এবং মাদকের বিক্রির সাথে জড়িত এসব কাজ ছাড়তে পারে নাই।এরপর, হঠাৎ করে প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে ডিভোর্স না দিয়ে তার স্বামী জুবায়ের তার আপন মামাতো বোনকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীকেও প্রথম স্ত্রীর মতো একইভাবে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করে। আর তার কথায় রাজি না হলে প্রথম স্ত্রীর মতো প্রতিরাতে তার উপরও চলে শারীরিক নির্যাতন। এরপর সেই হঠাৎ করে তৃতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসেন এবং নতুন তৃতীয় বউয়ের উপর ও চলে একই অত্যাচার।স্থানীয় গ্রামবাসী বলেন, জুবায়ের মাদকের বড় ডিলার। আমাদের গ্রামগুলো ভারত বর্ডার সীমান্ত গ্রাম। তাই জুবায়ের বড় বড় মাদকের চালান ঢাকা-চট্টগ্রাম বিশ্বরোড দিয়ে মাদকের চোরাকারবারি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদক পাচার করে মোটা অঙ্কের টাকা কামায়। এ টাকা দিয়ে যেকোনো লোককে কিনে ফেলে আর এরা এত খারাপ হয় যে নিজের স্ত্রীকে পরের বিছানা পাঠাতেও তাদের দ্বিধাবোধ করে না।এলাকাবাসী আরও বলেন, যার ফলে আমরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না। ইতঃপূর্বে প্রথম স্ত্রী ইসরাত জাহান রুবি ফেনী সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন এবং ফেনী আদালতে মামলায় স্বামী জুবায়ের আহমেদের দেড় বছরের সাজা হয়।জুবায়ের আহমেদের নামে গ্রেফতার ওয়ারেন্ট বের হওয়ার বিষয়ে প্রথম স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, এখনো পর্যন্ত মাদক কারবারি ও নারী নির্যাতনকারী ওয়ারেন্টভুক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামি জুবায়েরকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করতে পারেনি? অতি দ্রুত আসামিকে যেন গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়।