• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২৭শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ রাত ১২:৩১:১৬ (12-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:

শ্রীপুর হানাদার মুক্ত দিবস, রক্তে রাঙানো ১২ ডিসেম্বর

গাজীপুরের (শ্রীপুর) প্রতিনিধি : ​১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, সম্মুখ যুদ্ধ এবং কিশোর মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয় এবং স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা ওড়ে।শ্রীপুর মুক্ত হওয়ার এই দিনটির পেছনে রয়েছে ৭ ডিসেম্বরের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ এবং ১১ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত আঘাত।কিশোর সাহাব উদ্দিনের আত্মত্যাগ ও ইজ্জতপুরের যুদ্ধ​১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে শ্রীপুরের ইজ্জতপুর ব্রিজের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সাহসী আক্রমণ সংঘটিত হয়। জেড আই সুবেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে হামলা চালায়। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ। এই সম্মুখ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন গোসিঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কিশোর সাহাব উদ্দিন। শহীদ হন একজন পাকসেনা ও তিন রাজাকার। এই হামলার মধ্য দিয়ে ইজ্জতপুরের রেলসেতু ধ্বংস করে হানাদারদের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।হানাদারদের বর্বরতা ও ক্যাম্পের অবস্থান​মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল হক জানান, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল শ্রীপুরে প্রবেশ করে হানাদার বাহিনী। রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস থেকে ট্রেনযোগে তাদের যোগাযোগ ছিল সহজ। তারা শ্রীপুর থানা (প্রধান ঘাঁটি), গোসিঙ্গা কাচারি বাড়ি, কাওরাইদ, সাতখামাইর, ইজ্জতপুরসহ মোট ৮টি ক্যাম্প গড়ে তোলে।এসব ক্যাম্পে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় নিরীহ নারী-পুরুষদের ধরে এনে বর্বর নির্যাতন চালানো হতো এবং অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার বাবা, ভাই ও আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করা হয়। শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ মাঠে ১২ জন শহীদের গণকবর (ফকির আলমগীর বাদশা আকন্দ, ওমর আলী প্রধান, আব্দুছ ছামাদ, লিয়াকত আলী মিঞাসহ) সেই বর্বরতার নীরব সাক্ষী।চূড়ান্ত প্রতিরোধ ও বিজয় ইজ্জতপুরের হামলার পর পাক সেনারা তাদের সব ক্যাম্প গুটিয়ে শ্রীপুর থানা ক্যাম্পে শক্ত অবস্থান নেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মন্ডল (নুরুমুক্তি) জানান, মুক্তিযোদ্ধারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী থানা ক্যাম্প চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং হানাদারদের রসদ ও খাদ্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়, যাতে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।অব্যাহত আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে এবং ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক নূর মোহাম্মদ ফকিরের নেতৃত্বে মরদেহ উদ্ধারের সময় পাল্টা গুলির মুখে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার দিকে পিছু হটতে শুরু করে।অবশেষে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা ১২ ডিসেম্বর ভোর রাতের মধ্যেই শ্রীপুর ছেড়ে যায়।​১২ ডিসেম্বর ভোরে শ্রীপুর সম্পূর্ণরূপে হানাদারমুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রীপুর হাসপাতালের সামনে প্রথম স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বরকে শ্রীপুর হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।