কালিয়াকৈরে হামলার শিকার সাংবাদিকের অভিযোগ না নিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধে ওসির মামলা
স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে থানা হেফাজতে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে মিথ্যা মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিকট আত্মীয়দের নিয়ে সিন্ডিকেট করে ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানের উপর নির্দেশে সন্ত্রাসী হামলা করা হয়। দুর্বৃত্তদের হামলায় এশিয়ান টেলিভিশনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ক্যামেরাম্যানসহ স্থানীয় এক সাংবাদিক এবং একজন পথচারী আহত হয়। পরে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হওয়া দুইজন ব্যক্তিকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়।এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে কালিয়াকৈর থানার ওসি আব্দুল মান্নান দিনভর নানা তালবাহানায় মামলা না নিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রেখে বিষয়টা মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। পরে দুর্নীতিবাজ কালিয়াকৈর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে মামলা না করার জন্য প্রথমে অনুরোধ করেন, পরে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তিনি বলেন, রাত ৮টা পর্যন্ত আমার উপরে দায়িত্ব এটা মীমাংসা করার, আর না হলে অন্য ব্যবস্থা করবো।শেষ পর্যন্ত বিষয়টা মীমাংসা করতে না পেরে উল্টো হামলায় আহত ভুক্তভোগীকে থানায় আটক রেখে সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। সেই সাথে এশিয়ান টেলিভিশনের সাংবাদিকদের উপর হামলা হওয়ায় ওসি আব্দুল মান্নানকে শুধুমাত্র আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এশিয়ান টেলিভিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও এই মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়।ক্যামেরাম্যান থানা হেফাজতে থাকাকালীন কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মান্নানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ও নির্দেশনায় এসআই শহিদুলসহ সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী কালিয়াকৈর থানায় এজাহারে উল্লেখিত ২নং বিবাদী সিরাজুল ইসলাম ও তার ভাতিজা ৩নং বিবাদী আজিম হোসেন হাইচেসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ক্যামেরাম্যানকে কিল, ঘুসি ও নিচে ফেলে বুট দিয়ে লাথি এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে। সেই সাথে থানা হেফাজতে ক্যামেরাম্যানকে করা অত্যাচারের বিষয়ে যদি কোর্টে গিয়ে বলে তাহলে আরও একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণের পুলিশিং হয়রানি করবে বলে ওসি আব্দুল মান্নান হুমকি দেয়।ওসির বিরুদ্ধে এই বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে ইতোমধ্যে পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক অভিযোগটি ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি, অ্যাডমিন, মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদকে গুরুত্ব সহকারে তদন্তের নির্দেশ দেন।পরে অতিরিক্ত ডিআইজি-অ্যাডমিন মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কালিয়াকৈর সার্কেল মো. মেরাজুল ইসলামকে আগামী ৭-কার্য দিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত (সাক্ষীদের জবানবন্দি ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ড পত্রসহ) বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এদিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার ভুক্তভোগীর করা থানা হেফাজতে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) আমিনুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়। তিনি এরই মধ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছেন বলে নিশ্চিত করেন।পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এআইজি-মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন অফিসার (পুলিশ সুপার) মো. এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। পুলিশ মহা-পরিদর্শক, আইজিপি স্যার ইতোমধ্যে বিষয়টি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট আসলে দ্রুত সময়ের মধ্যে গুরুত্ব সহকারে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।