গাইবান্ধার সাঘাটায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শরতের শুরুতেই বাজতে শুরু করেছে দেবী দুর্গার মর্তে আগমনী বার্তা। বরাবরের মত এবছরও সবচেয়ে বেশি পূজা মন্ডপ তৈরী হচ্ছে, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায়। বেশি পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিমা তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সাঘাটা ও পুটিমারি পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীরা।গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় এ বছর ১০টি ইউনিয়নে ৬৭টি পূজা মন্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। জেলার সাঘাটা উপজেলায় বেশি পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিমা তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সাঘাটা ও পুটিমারি পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর তারা প্রতিমা নির্মাণসহ বিভিন্ন মেলায় খেলনা সামগ্রী ও তৈজসপত্র তৈরি করে ভাটার আগুনে পুড়িয়ে তা বিক্রি করে আসছেন। পালপাড়া গ্রামে ৫০টি পরিবার রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ শিল্পী ও অন্তত ২০ জন নারী শিল্পী রয়েছেন। প্রত্যেক পরিবারের নারীদের শিল্প কাজে রয়েছে নিপুণ দক্ষতা। তাই পুরুষ শিল্পীদের পাশাপাশি পালপাড়ার প্রত্যেক নারীরাও মাটির তৈরি বিভিন্ন শিল্পসাগ্রী তৈরির কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছেন।বিশেষ করে, প্রতিমার মুখ মণ্ডল তৈরির নিপুণ কাজে নারী শিল্পীরা খুবই দক্ষ। এ বছর তারা দুই শতাধিক প্রতিমা নির্মাণ করেছেন। এ সকল প্রতিমা তৈরিতে ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন তারা। তিন মাস আগে থেকে প্রতিমায় মাটির প্রলেপের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ। এখন চলছে সর্বশেষ মাটির প্রলেপের কাজ। যাকে বলা হয়, দো’মাটি করা। এর পর রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলবেন প্রতিমার দৃষ্টি নন্দিত রূপ।এখানকার শিল্পীরা উপজেলা ব্যতীত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মন্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরি করে থাকেন।তবে প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, বাঁশ ও মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমা তৈরি করে বিক্রিতে লাভ তেমন হচ্ছে না। এখন সীসার তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরি হওয়ায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর কমে গেছে। তবুও বংশগত এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে পূজা ও মেলার জন্য মাটির জিনিসপত্র তৈরি, টপ, খেলনা, রিং সিলসহ প্রতিমা বিক্রি করেই কোনো রকমে জীবন যাপন করছেন এ শিল্পের সাথে জড়িতরা।পঞ্জিকা মতে, বাংলা সনের কার্তিক মাসের ৩ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে মহালয়ার দিন থেকেই মর্তলোকে দেবীর আগমনী বার্তা বেজে ওঠবে। দশমীর মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের এ পূজার অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে।প্রতিমা শিল্পী, দীনেশচন্দ্র পাল, দিলীপ আক্ষেপ করে বলেন, বাঁশ ও মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমা তৈরি করে বিক্রিতে এখন তেমন লাভ হচ্ছে না। এখন সীসার তৈরি হাড়ি পাতিল তৈরি হওয়ায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রে কদর কমে গেছে।সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ রাকিব হোসেন জানান, শারদীয় দুর্গা পূজায় যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে থাকবে আনসার, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্য। মন্ডপের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরিতে থানা পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে ।গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসাহাক আলী বলেন, সাঘাটা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৬৭টি পূজা মন্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসনিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছেন বলেও জানান তিনি। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে থাকবে আনসার, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্য।