• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১২:৫৬ (27-Jul-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১২:৫৬ (27-Jul-2024)
  • - ৩৩° সে:

জুলুম অত্যাচারীর কর্তৃত্ব ও শক্তি বিস্তারের হাতিয়ার

লেখক, মো: কামাল উদ্দিন: জুলুম ও অপরাধের সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়টি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ দু’ভাবেই হতে পারে। একজন সরাসরি জুলুম-নির্যাতন করলে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জুলুমকারী। অপর একজন তার জুলুম-নির্যাতন ও অপরাধে সহযোগিতা করলে, নৈতিক ও বাস্তব সমর্থন জোগালে তিনি পরোক্ষ জুলুমকারী।প্রথমজনের জুলুমের দায় থেকে দ্বিতীয়জন মুক্ত থাকতে পারে না। কিন্তু সমাজে পরোক্ষ জুলুম-সংযুক্ত মানুষেরা নিজেদের দায়বদ্ধতার কথাটি মনেই করতে চান না। যেন দৃশ্যমান প্রথম জুলুমকারী ব্যক্তিটিই একমাত্র জুলুমকারী, তাকে মদদ ও সমর্থনদাতার সেখানে কোনো দোষ-জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণ নেই। অথচ এটি একটি ভ্রান্ত চিন্তা। মূলত জুলুমের দায় থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরোক্ষ ভূমিকা-রাখা মানুষের দায়ও কোনো অংশে কম না।জুলুম ও অন্যায়-অপরাধের কৌশল কখনো কখনো একশ্রেণির মানুষের কর্তৃত্ব ও শক্তি বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জুলুম করে নিরীহ মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে জুলুমের প্রধান নির্দেশদাতা বা প্রেরণাদাতা ব্যক্তিটি থেকে নিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত সর্বশেষ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি সচেতন ব্যক্তি কিংবা স্তরই জুলুমের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যক্ষ সত্তা।আল্লাহ তাআলা বলেন—وَ تَعَاوَنُوْا عَلَي الْبِرِّ وَ التَّقْوٰي وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَي الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ.তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে-অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে-অন্যের সহযোগিতা করবে না। —সূরা মায়িদা (৫) : ২এ থেকে বোঝা যায়, অপরাধ কিংবা জুলুমের মূল ব্যক্তি হওয়া যেমন নিষেধ, তেমনি অপরাধ ও জুলুম অন্যায় ও পাপের সহযোগী হওয়াও নিষেধ। মন্দ কাজে সহযোগিতা কোনো নির্দোষ বিষয় না। কোনো কোনো জুলুমের চরিত্র আরো একটু বিস্তৃত। কর্তৃত্ব ও নিপীড়নের পাশাপাশি আর্থিক জুলুমও পরিচালনা করা হয়। অন্য কথায় জুলুম ও পীড়নের মধ্য দিয়ে নানা রকম আয়-উপার্জনের পথ গ্রহণ করা হয়। জুলুমই যেন হয়ে ওঠে জুলুমকারীর জীবিকার মূলধন।আর একথা তো মিথ্যা নয় যে, সমাজে প্রত্যক্ষ জুলুমকারীদের যারা সমর্থন জোগায়- যারা পরোক্ষ জুলুম-অপরাধে যুক্ত থাকে, তাদের বেশিরভাগই কোনো না কোনোভাবে প্রত্যক্ষ জুলুমকারীর পক্ষ থেকে সাহায্য-স্বার্থ আদায় করে থাকে। জুলুমে সমর্থনের সঙ্গে যুক্ত থাকে সুবিধা ও মুনাফা। পরোক্ষ জুলুমবাজদের এটি হচ্ছে দ্বিতীয় অপরাধ। কোনো স্বার্থ-সুবিধা ছাড়াই যদি কেউ অপরাধ, পাপ ও জুলুমের সমর্থন করে তবে সে জুলুমে সংযুক্তির দায় ভোগ করবে। কিন্তু সমর্থন আর সমর্থনের বদৌলতে ধনদৌলত ও সুবিধা অর্জন করলে সমর্থনদাতা পরোক্ষ জুলুমকারীর দ্বিগুণ দায় ও গোনাহও ভোগ করতে হবে।অবিস্তারযোগ্য ব্যক্তিগত পাপ ব্যক্তির করা এবং সেই পাপে সহযোগিতা করার তুলনায় সৃষ্টির প্রতি কোনো জুলুম সংগঠিত করা এবং সেই জুলুমে সহযোগিতা করার মন্দত্ব অনেক বেশি। অথচ ব্যক্তিগত পাপও নিষেধ এবং তাতে সহযোগিতা করাও নিষেধ।এতে স্পষ্ট হয়- জুলুম-নির্যাতনের মতো সংক্রমিত সামাজিক পাপের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সংযুক্তি কতটা আত্মবিনাশী ও ক্ষতিকর। বহু ঘটনায় জীবন ও সমাজের বহু অঙ্গনে জুলুম কিংবা উৎপীড়ন টিকে থাকার একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে জুলুমের প্রতি নানা পর্যায়ের মানুষের অসচেতন কিংবা সুবিধাভোগী সমর্থন। সমাজের ভেতর থেকে পাওয়া সমর্থন-সহযোগিতার কারণেই প্রত্যক্ষ জুলুম তার সক্রিয়তা ও দাপট ধরে রাখতে পারে।এছাড়া, এ সমাজে বিরাজমান নেক কাজ, সততা ও সরলতার ওপর জুলুমের কালো মেঘ বিস্তৃত হয়ে গেলে ইতিবাচকতার শুভ্রতা ঢাকা পড়ে যায়। জীবনের নানা স্তরে ছড়িয়ে পড়ে জুলুমের হাহাকার এবং কষ্টের দীর্ঘশ্বাস। এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে পরোক্ষ জুলুমের হাতগুলি গুটিয়ে নেওয়া। পাপাচার ও জুলুমে যুক্ত ব্যক্তিরা সমর্থন-সহযোগিতা পেতে পারে এমন সব আচরণ বন্ধ করে দেওয়া। মদদ-সমর্থন না থাকলে প্রত্যক্ষ জুলুমের চাবুক এমনিতেই শক্তিহীন হয়ে যায়।একটি সমাজকে রহম ও রহমতহীন করে অভিশাপের বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম উপলক্ষ্য হল, সমাজজুড়ে নানামাত্রিক জুলুম-অপরাধের অনুশীলন। এতে বান্দার হক নষ্ট হয়, মানুষের হাহাকারে বাতাস ভারি হয়। এর কুফল ও দুভোর্গ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে।হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী জালিমকে সহযোগিতা করতে হয় তাকে নিবৃত্ত করে, আর মজলুমকে সহযোগিতা করতে হয় তাকে জুলুম থেকে রক্ষা করে। জুলুমের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অপরাধের দরজা বন্ধ হয়ে যাক। জুলুমে যুক্ত মানুষেরা বিবেক ফিরে পাক আর জুলুমের শিকার হওয়া থেকে মজলুমরা সুরক্ষা লাভ করুক। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুক। আমিন।লেখক: মো: কামাল উদ্দিন                                                                                                                                                                                                                                                                                           লেকচারার, আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান