দাগনভূঞায় ভয়াবহ বন্যায় কবলিত ৫ লক্ষাধিক মানুষ
দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি: ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার কবলে পড়েছেন প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। দাগনভূঞা উপজেলা এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে পানি বৃদ্ধি পায়নি। সব জায়গায় বাড়ছে পানি। এতে গৃহবন্দি ও আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন বানভাসি মানুষ। অনেকেই সুবিধাজনক মনে করে এরই মধ্যে ঘর ছেড়েছেন অন্যত্র। এবার সর্বকালের রেকর্ড বন্যা এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী উপজেলা বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠানো হলেও দাগনভূঞায় সেভাবে ত্রাণ পৌঁছেনি। ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের নৌকা দেখলেই অসহায় মানুষ সেদিকে ছুটে যাচ্ছেন।সিন্দুরপুর রাজাপুর, কোরাইশমুন্সি, গজারিয়া, পূর্বচন্দ্রপুর, ইয়াকুবপুর, মাতুভূঞা, রামনগর, সদর ইউনিয়নসহ সব জায়গায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে । এক্ষেত্রে নৌকার সংকট দেখা দিয়েছে তীব্রভাবে। দুর্গম এলাকায় যেতে পারছেন না ত্রাণবাহী গাড়ি কিংবা অন্য যানবাহন। এতে হাজার হাজার বানভাসি পরিবার খাদ্য সংকটে দিন পার করছেন। অন্যদিকে সড়কে দেখা গিয়েছে দুই বা তিনফুটের অধিক পানি।ফেনীতে মঙ্গলবার থেকেই বন্যার পানি উঠতে শুরু করলেও দাগনভূঞায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয় বৃহস্পতিবার থেকে। তবে এরই মধ্যে এই উপজেলায় কিছু জায়গায় পানি কিছুটা কমেছে।ইয়াকুব ইউনিয়ন চন্ডিপুর সাবেক ইব্রাহিম মেম্বার জানান, যেদিকে তাকাই সেদিকেই পানি। ঘরে পানি, মসজিদে উঠেছিলাম সেখানেও গতকাল পানি উঠেছে। স্থানীয় লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রসহ বাড়ি ছেড়ে প্রতিদিন যাচ্ছেন অন্যত্র।এসব গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই পানি উঠেছে। হাঁটু ও কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা। কোথাও কলার ভেলা দিয়ে অতি জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করছেন। কেউ কেউ জাল দিয়ে মাছ ধরে খাবারের সংস্থান করছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়ক দাগনভূঞা থেকে বসুরহাট সড়ক সেখানেও পানি উঠেছে প্রায় হাঁটু সমান। সড়কে নির্মাণ কাজ চলমান পরেই বন্যার পানিতে বেশিরভাগ সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় গর্ত। যানবাহন সতর্কতা চলার পরও সিএনজি, মোটরবাইক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভোগান্তির নেই শেষ চলাচলকারীদের। এ যেন এক নির্মম ইতিহাস।ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ জানান, দাগনভূঞা ফেনীতে আমাদের বয়সে কোনোদিন এমন বন্যা দেখিনি। গ্রামবাসীদের অনেকে পাকা বাড়ির ছাদে, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সেখানেও দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। অনেকের সামর্থ্য থাকলেও খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং দোকানে পানিতে ডুবে থাকায় কিনতে পারছেন না নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। চিড়া, মুড়ি, মোমবাতি তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে।তিনি আরও জানান, খাবারের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সংকটেও পড়েছেন দাগনভূঞার মানুষ। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকট তৈরি হয়েছে। দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান বন্যা দুর্গত মানুষেরা।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ শিক্ষার্থীরা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন বন্যার্তদের সাহায্য সহযোগিতা করছেন সাধ্যের মধ্যে। জিরো পয়েন্টে বসানো হয়েছে বন্যার্তদের সহযোগিতার দান বক্স। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সর্বশ্রেণির মানুষ। পানি বাহিত রোগ ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাসেবার স্বার্থে মেডিকেল টিম নিয়োজিত রাখা হয়েছে।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিতা চাকমা জানান, প্রশাসনিকভাবে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জরুরি সাহায্যার্থে যেকোনো স্থানে ২৪ ঘণ্টা উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ সহায়তা করছেন। উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের বিষয়ে তদারকি রয়েছে।