মাটিরাঙ্গায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এক শ্রেণির সিন্ডিকেট অবাধে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে। রাতের অন্ধকারে ড্রেজার ও পেলোডার দিয়ে চলছে পাহাড় ধ্বংসের এই কর্মযজ্ঞ। এতে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তেমনি কৃষি জমির ‘টপ সয়েল’ বা উপরিভাগের মাটি বিক্রির ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষি।সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোমতী, তবলছড়ি, আমতলী, বেলছড়ি, তাইন্দং, বর্ণাল ও মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকায় পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা চলছে। বিশেষ করে তবলছড়ি ও গোমতী এলাকায় পাহাড় কাটার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তবলছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির সন্নিকটেই পাহাড় কাটা হলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। এছাড়া শুকনাছড়ি এলাকায় আঞ্চলিক সড়কের পাশে পাহাড় কেটে কৃষি জমি ভরাট করা হচ্ছে।২০২০ সাল থেকে মাটিরাঙ্গায় আধুনিক যন্ত্রপাতির ফেলোডার বা ড্রেজার মাধ্যমে পাহাড় কাটার সূত্রপাত হয়। বর্তমানে উপজেলায় ১০টিরও বেশি এমন মেশিন সক্রিয় রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের দোহাই দিয়ে মেশিন ভাড়া করে এনে রাতের আঁধারে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় কাটা হচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিচ্ছে। তবে তবলছড়ি ইউপি সচিব ওসমান আলী তার বিরুদ্ধে ওঠা অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শুধুমাত্র সরকারি প্রকল্পের কাজে মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে।মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার সবুজ আলী জানান, ‘কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি সরিয়ে ফেললে মাটির জৈব পদার্থ অপসারিত হয়। এতে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং জমিতে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে পাহাড় কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে এবং বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে গেছে ।’পরিবেশবাদীদের মতে, প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে মাটিরাঙ্গা সেনা জোনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা অবৈধ পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’