• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১লা মাঘ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৬:৪৭:৪৫ (14-Jan-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১লা মাঘ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৬:৪৭:৪৫ (14-Jan-2025)
  • - ৩৩° সে:

কুড়িগ্রামে বাবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ৩৫ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে চিকিৎসার ব্যয়ভার মিটাতে না পেরে অবশেষে নিজের শিশু কন্যাকে ৩৫ হাজার টাকায় দত্তক দিয়েছেন বাবা। কন্যা শিশুটির নাম খাদিজাতুল কোবরা (৩ দিন)। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের দড়িকিশোরপুর গ্রামে।জানা যায়, দড়িকিশোরপুর গ্রামের খিজির উদ্দিন (চৌকিদারের) ছেলে দুলাল মিয়ার (৪৪) মুখের মাড়ি পঁচন রোগে আক্রান্ত। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। সেখানেও চিকিৎসার উন্নতি না হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেও চিকিৎসার উন্নতি না হলে রংপুর কসির উদ্দিন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন করা হয়।প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর দুলাল মিয়ার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। তবে নিজের সহায় সম্বল যা ছিল সব শেষ হয়েছে চিকিৎসার ব্যয়ে। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে নিজের ৩ দিন বয়সের কন্যা সন্তানকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে স্টাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে উপজেলার বাকরেরহাট নিজাই খামার এলাকার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়।শিশুটির বাবা দুলাল মিয়া চায়ের দোকানে মেসিয়ার হিসাবে কাজ করতেন। মা শাহিমা বেগম (৩২) অন্যের বাড়িতে ও জমিতে দিনমুজুর হিসাবে কাজ করেন।শিশুটির মা শাহিমা বেগম বলেন, স্বামীর চিকিৎসাজনিত কারণে লক্ষাধিক টাকা ঋণ করেছি। তাছাড়া টাকার অভাবে চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না, ঋণও পরিশোধ করতে পারছি না। এদিকে স্বামীর অসুস্থতার কারণে আয়-রোজগারও বন্ধ। আমার ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই।তিনি আরও বলেন, আমার ৬ ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্য ৮ জন। এর মধ্যে বড় মেয়ের তিন বছর আগে বিয়ে দিয়েছি। এছাড়া দোলেনা খাতুন (৮ম শ্রেণি), শাকিল মিয়া (৩য় শ্রেণি) ও রমজান আলী নূরানী মাদ্রাসায় পরাশোনা করছে। এখন বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছি না। তাদের খাবার কিনতে পারছি না। চিকিৎসার টাকার জন্য ছোট মেয়ে খাদিজাতুল কোবরাকে এক নিঃসন্তান পরিবারের কাছে দত্তক দিয়েছি। বিনিময়ে তারা স্বামীর চিকিৎসার জন্য ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে।শিশুটির মা শাহিমা বেগম আরও জানান, মেয়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কী করব, স্বামীর চিকিৎসার দরকার। তিনি অসুস্থতার জন্য কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। তিনি সুস্থ থাকলে আমাদের খাওয়া-পরা চালাতে পারবেন। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে দত্তক দিয়েছি।এলাকাবাসী আলামীন ইসলাম (৩২), শাহাজামাল মিয়া (৩৩), মহুবর মিয়া (৫২), দুলু মিয়া (৪৫), নয়া (৫০), আফজাল হোসেন (৫০), জয়নাল আবেদিন (৫৬) ও গণি মিয়া (৬০) সহ আরও অনেকে জানান, দুলাল মিয়ার চিকিৎসার জন্য এলাকাবাসী চাঁদা উঠিয়ে কিছু টাকা দিয়েছেন। আরও টাকার প্রয়োজন হলে তার ছোট মেয়েকে দত্তক দিয়েছেন। এখন তার চলার মতো কোনো আয় রোজগার নেই। দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন বলে জানান তারা।থেতরাই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দিন মজুর দুলাল মিয়া অসুস্থ হলে তার অপারেশনের জন্য অনেক টাকার দরকার ছিলো। কিছু টাকা এলাকাবাসী চাঁদা উঠিয়ে দিয়েছে। তাতেও না হওয়ায় তার ছোট মেয়েকে দত্তক দিয়ে তার বিনিময়ে কিছু টাকা নিয়েছেন। সে টাকা দিয়ে চিকিৎসা চলছে তার।উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, পরিবারটির কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন পরিবারটি পাশে থাকবে।

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান