২৫ বছর শিকলে বন্দী আখাউড়ার ডালিম খাঁন
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: শিল্পীর গানের সুরে বলতে হয় এই দুঃখের নাই কোন শেষ, ওরে মৃত্যুর পর মন খুঁজে নিবি সুখের নতুন কোন দেশ, সুখের নতুন কোন দেশ, ডালিমের জীবনটা যেন সেই গানের সাথে মিলে যায়।১ কিংবা ২ বছর নয় প্রায় ২৫ বছরের অধিক সময় শেকলে বাঁধা অবস্থায় জীবন পার করছেন আখাউড়ার ডালিম খাঁন। তিনি উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শোনলৌহঘর গ্রামের রমজান খানের ষষ্ঠ ছেলে ডালিম।কাগজপত্রে তার নাম নাছির খান তবে এলাকায় পরিচিত ডালিম খাঁন নামে, স্থানীয়দের দাবি সুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতে অনেকটা মেজর ডালিমের মতো লাগতো তাই সকলে ডালিম নামেই তাকে ডাকতে পছন্দ করে। ডালিম খাঁনের বয়সের হিসেব থেকে কেটে গেছে ৩৭ টি বছর, যার মধ্যে ২৫ বছর কেটেছে শেকলে বন্দী অবস্থায়।অসুস্থ ডালিম বসে থাকতে থাকতে হাত পা শক্ত হয়ে গেছে, বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। শুনতে অমানবিক মনে হলেও এমনটি ঘটেছে তার সাথে। যদিও পরিবারের দাবি সে মানসিক প্রতিবন্ধী এ কারণেই শেকল বন্দী করা হয়েছিল তাকে।শরীলে কাপড় নেই, থাকার বিছানা নেই, দু মুঠো খাবারের ব্যবস্থা নেই, সকল নেই আর নেই এর মধ্যে কোনো রকম জীবন নিয়ে বেঁচে আছে ডালিম খাঁ,পরিতাপের বিষয় বাঁধা অবস্থায় রাতে মাটিতে বসে বসে ঘুমান ডালিম, কখনোও বৃষ্টিতে ভিজে আবার কখনো সূর্যের প্রখর রোদে বসে থাকে কেউ খবর নেই না, কেউ খাবার দেই না, একটা সময় মা দেখা শুনা করতো তিনিও মারা গেছে অনেক বছর আগে, ৯৫ বছর বয়সি বাবা মাঝে মধ্যে খাবার দেয় এই তো ডালিমের জীবন।ডালিমের পরিবার জানায় ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মেধা তালিকার শীর্ষে থেকে ৭ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন ডালিম, সে সময় একদিন দুপুর বেলায় স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি হঠাৎ রাস্তায় তার শরীর খারাপ লাগছিলো,বাড়ি ফিরে মাকে বলে আমার শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে প্রচণ্ড জ্বরে শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে, আমাকে মাথায় পানি দাও আর কাঁথা দিয়ে শরীর টা ডেকে দাও, সেই থেকেই তার দুঃখ দুর্দশার শুরু, জ্বর যদিও ভালো হয়েছে কিন্তু হারিয়েছেন স্মৃতি শক্তি।পরবর্তীতে তার মা বাবা তাকে অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছেন, আর্থিক সমস্যার কারণে একটা সময় চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয় তার পরিবার, ঠিক সেই সময় থেকেই তাকে শেকলে বন্দী করে রাখা হয়, সেই থেকে ডালিম আর সুস্থ হয়নি।অসহায় ডালিমের বাবা সহ স্থানীয়দের দাবি সরকার অথবা মানবিক কোনো সংগঠন যদি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতো, সে হয়তো শেকলে বাঁধা জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে বাকি জীবন মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারতো।এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হিমেল খাঁন বলেন আমি যতটুকু জানতে পেরেছি সে দীর্ঘদিন যাবত একটি ঘরে আবদ্ধ ছিল, এক জায়গায় রেখে দেওয়া হয়েছে। তার যে অ্যাক্টিভিটিজ হাত পায়ের মুভমেন্ট হয় নাই, প্রত্যেকটা জয়েন্ট স্টিফ হয়ে গেছে এজন্য সে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না, আর মানসিক রোগগুলো আপেক্ষিক এগুলো উন্নত চিকিৎসা দিলে চেইঞ্জ হবে। শারীরিক ও সুচিকিৎসা দিলে আমার মনে হয় সে সুস্থ হবে।