• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১৩ই কার্তিক ১৪৩২ রাত ০১:০৬:৫৯ (29-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

নরসিংদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে গ্রাম-কৃষিজমি, আইন থাকলেও অপরাধীরা অধরা

​নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীতে বর্তমানে কোনো বালু মহল ইজারা না থাকলেও মেঘনা নদীর বুকে শক্তিশালী চুম্বক ড্রেজার ও ভেকু মেশিন ব্যবহার করে বেপরোয়াভাবে চলছে বালু উত্তোলন। ফলে নদীর তীর ধসে বসতভিটা ও কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বারবার প্রশাসন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সত্ত্বেও নেপথ্যের সিন্ডিকেট ও তাদের অবৈধ কার্যক্রম থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন, এমনটাই দাবি করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলনকারীরা এতটাই শক্তিশালী যে, মোবাইল কোর্ট যাওয়ার আগেই খবর পেয়ে যায় এবং মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটের উপর গুলি বর্ষণ করে, এলাকায় মানববন্ধন হলে জনগণকেও মারপিট করে।​​নরসিংদীর মেঘনা নদীর বিশেষ করে গরিপুরা পয়েন্ট এলাকায় অবৈধ চুম্বক ড্রেজার ব্যবহার করে বালু উত্তোলনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। স্থানীয়রা জানান, এই শক্তিশালী যন্ত্রগুলো গভীর থেকে বালু তুলে নিচ্ছে, যা নদীর প্রাকৃতিক চ্যানেলকে দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে এবং তীরভাগকে দুর্বল করে তুলছে। ফলস্বরূপ, ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী গ্রামবাসীর।নরসিংদীর শুটকি কান্দা, জগতপুর, আলোক বালি, মুরাদনগর, বাখর নগর ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের দিপুর চেয়ারম্যান এবং আসাদুল্লাহ বালু উত্তোলন করত তারা পালিয়ে যাওয়ার পর সিন্ডিকেট পরিবর্তন হয়েছে। ​গত কয়েক মাসে উপজেলা প্রশাসন ও মোবাইল কোর্ট মেঘনা নদী এলাকায় একাধিক অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে একাধিক ড্রেজার, এক্সকাভেটর ও বাল্কহেড জব্দ করা হলেও থামছে না বালু উত্তোলন।স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলনের যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত হলেও নেপথ্যে থাকা মূল সিন্ডিকেট ও প্রভাবশালীরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির যোগসাজশে তারা দ্রুতই নতুন যন্ত্রপাতি বসিয়ে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করে। এমনকি অভিযান ঠেকাতে প্রশাসনের ওপর হামলা ও বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করে তারা।​​এই অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন কেবল স্থানীয় বসতিকেই নয়, নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ড্রেজারের আঘাতে নদীর তলা ও তীর কেটে যাওয়ায় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, বিশেষত ইলিশের ডিম ছাড়ার এলাকাগুলো ধ্বংস হচ্ছে। এতে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকা এবং সামগ্রিকভাবে অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।​​ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও পরিবেশবাদীরা অবিলম্বে কার্যকর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রধান দাবি, অবৈধ ইজারা বাতিল, নেপথ্যের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ও দণ্ডবিধির আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত নদী তীর পুনর্নির্মাণের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ। তারা মনে করেন, কেবল যন্ত্রপাতি জব্দ করে এই গুরুতর পরিবেশগত ও সামাজিক অপরাধ বন্ধ করা যাবে না; প্রশাসন ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং কঠোর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা ছাড়া মেঘনার অবক্ষয় থামানো অসম্ভব। 

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান