পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের আদিতমারীতে এসএসসি'র প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। এ ঘটনা তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।১ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনা তদন্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার। এর আগে সকালে উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নে এ ভাষণ ব্যবহার হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।জানা গেছে, উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মঙ্গলবার ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা। সেখানে সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপকে ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এ প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে মহিষখোচা বহু মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একসেট প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমালোচনার সৃষ্টি হয়।প্রশ্নে পত্রে লেখা হয়, ইউনেস্কো ২০১৭ সালে একটি ভাষণকে “বিশ্ব প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যার অংশ বিশেষ এমন ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা’।”প্রশ্নপত্র প্রসঙ্গে মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হোসেন বলেন, আমরা উপজেলা শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ক্রয় করে পরীক্ষা নিয়েছি। সমিতি নিজেরা প্রণয়ন না করে বগুড়ার একটি প্রেস থেকে ক্রয় করেছে। এমন সমস্যা শুধু আমার বিদ্যালয়ে নয়, উপজেলার ১০টি বিদ্যালয়ে একই পরিস্থিতি হয়েছে। নিজেরা প্রশ্ন প্রণয়ন না করে ক্রয় করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া বিধি সম্মত হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।আদিতমারী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকট আত্মীয় কুমড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল এবং সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন মহিষখোচা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্পাদক চড়িতাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আ স ম রওশন নবী মোহন। আওয়ামী লীগ পরিবারের লোকজন সমিতির নেতৃত্বে থাকায় প্রশ্নপত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সারাদেশের অধিকাংশ স্থানে আওয়ামী দোসরদের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হলেও উপজেলা শিক্ষক সমিতিতে রয়েছে বহাল তবিয়তে।জাতীয় নাগরিক পার্টির সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ বলেন, আওয়ামী দোসররা আজও ভুল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদের প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। যারা বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরে খলনায়কের বক্তব্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম কাজল বলেন, সমিতি কোনো প্রশ্ন প্রণয়ন করে না এবং করেওনি। যারা বলেছে তারা ভুল বলেছে। আপনি নুরুজ্জামান মন্ত্রীর আত্মীয় কি না? এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তারা সমিতির ক্রয় করা প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে নিজস্ব প্রশ্ন ছাড়া পরীক্ষা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার বলেন, পরীক্ষা শেষে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাৎক্ষণিক শিক্ষক সমিতির নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে আগামী দিনের পরীক্ষার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষক সমিতি প্রশ্নটি বগুড়ার একটি প্রেস থেকে ক্রয় করে সরবরাহ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছে।