• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ সকাল ১০:৪০:১৪ (27-Jul-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ সকাল ১০:৪০:১৪ (27-Jul-2024)
  • - ৩৩° সে:

তানোরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে যুবকরা

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে অনলাইন জুয়া বা বেটিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছে উপজেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ। একই সাথে জুয়ার ‘ভার্চুয়াল বিষ’ ছড়িয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষের মাঝেও। সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। জুয়ার নেশায় অশান্তি-কলহের পাশাপাশি অনেক পরিবারকে বিপন্ন করে তুলছে। তবে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ হলেও এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই বললেই চলে।ফলে ঝুটঝামেলা ছাড়াই তরুণরা বাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসেই জুয়া খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন যুবকরা। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রলোভনে প্রচার করা বিজ্ঞাপনে এসব জুয়া বা বেটিং সাইটে ডুকে জুয়া খেলা শুরু করছেন যুবকরা। বুঝে না বুঝে কেউ একটি ক্লিক করলেই অ্যাপস কিংবা ওয়েবসাইটের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। শুরুতে সদস্য টানতে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন কৌশল।অল্প টাকায় লাখপতি হওয়া বা দ্বিগুণ মুনাফার লোভে অন্ধকার এ জগতে পা বাড়াচ্ছেন যুবসমাজের সব শ্রেণির-পেশার মানুষ। একসময় লোভে পড়ে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে নামে এই খেলায়। তখনই বেরিয়ে আসছে আসল বাস্তবতা। কারও কারও টাকা মুহূর্তেই হারিয়ে যাচ্ছে জুয়ার বোর্ডে।অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তানোরে শত শত মানুষ বেটিং বা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এসব জুয়া খেরায় অধিকাংশই স্কুল- কলেজে পড়ুয়া ও ছোট ছোট বিভিন্ন ব্যবসায় ও তরুণদের সংখ্যাই বেশি। জুয়ায় মোটা অংকের টাকার লোভে স্বর্বস্ব খুইয়ে অনেকে দেয়লিয়া হয়েছেন। ফলে, বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। ক্রমেই বাড়ছে আসক্তের সংখ্যা।চটকদার বিজ্ঞাপনের কারণে যারা জুয়ায় বাজি ধরেছে, তাদের খুব কম সংখ্যকই বড় ক্ষতি ছাড়া বেরিয়ে আসতে পারেনি। অনলাইন জুয়ায় প্রতিদিন এ উপজেলায় লাখ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। প্রতিটি গ্রামেই বেটিং ছড়িয়ে পড়েছে। অপর দিকে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও আইপিএলের ম্যাচগুলোকে কেন্দ্র করে চলছে জুয়ার আসর। কোনো ব্যাটসম্যান কত রানে আউট হবেন, কারও সেটা নিয়ে বাজি ধরার ইচ্ছা হলে স্ক্রিনে ভেসে উঠছে জুয়ার একাধিক সাইট।দেশি-বিদেশি এসব অ্যাপস ও সাইটে ব্যাটসম্যানের রানের ওপর জুয়ার রেট দেখানো হচ্ছে। এগুলো মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে ইনস্টলের পর সেখানে রেজিস্ট্রেশন বা অ্যাকাউন্ট খুলে ঘরে বসেই খেলা যায় এই জুয়া। একাধিক অনলাইন বেটিং অ্যাপসে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অফার সংবলিত পসরা সাজিয়ে বসে আছে। কোন টিম কত রান করবে, কোন টিম জয়ী হবে, কোন খেলোয়াড় কত রান বা উইকেট পাবে, কোন ওভারে কত রান হবে–এমন বহু আইটেম দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব অ্যাপে।কোন আইটেমের জন্য কত টাকা রেট তাও উল্লেখ করা রয়েছে। নিজ নিজ পছন্দের ইভেন্টে জুয়া ধরা যায়। এজন্য প্রথমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অ্যাপসের অ্যাকাউন্টে টাকা লোড করা হয়। পরে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ জুয়ায় লগিং করে তারা। হেরে গেলে টাকা চলে গেল। আর জিতলে মূল টাকাসহ জুয়ার রেটের টাকা অ্যাকাউন্টে ফিরে আসে। পরে সেখান থেকে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা তোলা যায়। কখনও স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমেও জুয়ার টাকা লেনদেন হয়।জুয়ায় আসক্তদের নিয়ে চরম অশান্তিতে রয়েছেন তানোর উপজেলার পরিবারগুলো। টাকার জন্য জুয়াড়িরা স্বজন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ধারকর্জ করছে। এ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পরিবারকে হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। চুরির মতো অপরাধেও জড়াচ্ছে জুয়াড়িরা। তবে সবাই হেরেই যাচ্ছে, এমন নয়। কেউ কেউ লাভও করছে। কিন্তু এ সংখ্যা হাতেগোনা।অনলাইন বেটিংয়ে আসক্ত কামার গাঁ ইউনিয়নের বাতাসপুর গ্রামের কাওছার আলী জানান, তিনি খেলা দেখার সময় বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন বেটিংয়ে আগ্রহী হন। লোভনীয় অফার দেখে একসময় আসক্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে তাঁর পরিবারে অশান্তিও হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েও তা খুইয়েছেন। তিনি এখন নিঃস্ব।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন একমাত্র ছেলে কলেজে পড়ে। প্রায়ই মোবাইলে খেলা দেখে। পরে জানা গেল, অনলাইনে সে শুধু খেলাই দেখে না, জুয়াও খেলে। প্রথমে গোপনে সে পরিবারের জমানো টাকা চুরি করে নিয়ে জুয়া খেলেছে। পরে আত্মীয়স্বজন ছাড়াও গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে অনলাইনে খুইয়েছে। পাওনাদাররা এখন বাড়িতে এসে ঝামেলা করছে। এসব কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে চরম অশান্তি তৈরি হয়েছে।সচেতন মহল বলছেন, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে এগুলো মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়বে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের একেবারে নিম্ন পর্যায়ের মানুষও এতে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত এসব সাইট বন্ধ করা দরকার। তা না হলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।যুবসমাজ ধ্বংসের কারণ জানতে চাইলে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফেসবুক ও অনলাইন জুয়া মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে সমাজে পরিচিত হয়ে গেছে। এখান থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন ব্যাপার।অনলাইন জুয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর থানার ওসি আব্দুর রহিম বলেন, যুবসমাজ ধ্বংসের মুল কারণ অনলাইন জুয়া এবং এটা ড্রাগ এর চেয়েও মারাত্মক ক্ষতি। এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান