• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৭:১০:২২ (28-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৭:১০:২২ (28-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

সুনামগঞ্জে কম্বাইন হারভেস্টার কেলেঙ্কারি, কৃষাণীর হাতে উঠলো কাঁচি

আজিজুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি: ধান কাটার ভরা মৌসুমে কম্বাইন হারভেস্টার কেলেঙ্কারি নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে আলোচনা রয়েছে। কৃষকরা ধান কাটার এই যন্ত্র না পেয়ে শ্রমিকের জন্য হন্যে হয়ে দিকবেদিক ছুটাছুটির করছে। উপায় না পেয়ে পাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষক পরিবারের নারী সদস্যরাও কাঁচি হাতে ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের কাছ থেকে ৭০ ভাগ টাকা ভর্তুকি নিয়ে কেনা জেলার ৮৭৩টি কম্বাইন হারভেস্টারের বড় একটা অংশ গোপনে বিক্রয় হয়ে গেছে অন্য জেলায়। এসব ধান কাটার যন্ত্র স্ব স্ব এলাকায় নেই। কিন্তু কৃষি অফিসের তালিকায় এখনো এই কম্বাইন হারভেস্টারকে দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’।কৃষকদের অভিযোগ, কম্বাইন হারভেস্টার কেনা বেচায় কৃষি অফিসের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজস থাকায় তালিকায় এখনো হারভেস্টার দেখানো হচ্ছে।শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবলু রায় ও তার সহোদর পৃতেশ রায়ের নামে দুই বছর আগে ভর্তুকির কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ হয়। ইউপি সদস্য বাবলু রায় দুই বছর আগেই তার বরাদ্দের হারভেস্টার বিক্রয় করে দিয়েছেন অন্য জেলায়। কিন্তু এখনো শাল্লার হারভেস্টারের তালিকায় তার নাম (তালিকার ২৫ নম্বরে) রয়েছে। বাবলু রায় নিজেই বৃহস্পতিবার প্রতিবেদককে বলেছেন, দেড় লাখ টাকা লাভে তিনি অনেক আগেই হারভেস্টার বিক্রয় করেছেন।কেবল বাবলু রায় নয়, জেলাজুড়ে তালিকায় থাকা অনেক হারভেস্টার এখন আর এলাকায় নেই। ভতুর্কির এই ধান কাটার যন্ত্র লাখ লাখ টাকা লাভে অন্য জেলায় বিক্রয় করা হয়েছে। এমন তুঘলকি কাজের সঙ্গে কৃষি অফিসের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।হারভেস্টারের মালিকের তালিকায় থাকা জামালগঞ্জ উপজেলার ১৫ জনকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেছেন ৩ জন। ফোন বন্ধ ছিল আট জনের। শাল্লা উপজেলার ১০ জনকে ফোন দিলেও রিসিভ করেছেন চার জন। বিশম্ভরপুরের ৯ জনকে ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেছেন চার জন।ধর্মপাশা উপজেলার ৭ জনকে ফোন দিলেও রিসিভ করেছেন চার জন। ছাতক উপজেলার ৮ জনকে ফোন দিলেও রিসিভ করেছেন তিন জন। দোয়ারাবাজর উপজেলার ৯ জনকে ফোন দিলে রিসিভ করেছেন তিন জন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১২ জনকে ফোন দিলেও রিসিভ করেছেন তিন জন। বেশিরভাগ কম্বাইন হারভেস্টারের মালিকের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।কৃষি অফিসেরই একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, অনেক কৃষকের কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কম্বাইন হারভেস্টারের ব্যবসা করেছেন রাজনৈতিক কর্মী ও কৃষি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অফিসের রেকর্ডে যে ফোন নাম্বার দেওয়া আছে, এটি কোনদিনই পাওয়া যায়নি। শুরু থেকেই এগুলো বন্ধ পাওয়াা যাচ্ছে।জামালগঞ্জ উপজেলার রামপুরের তাজউদ্দিন জানালেন, তার কম্বাইন হারভেস্টার নেত্রকোণায় আছে। শরীফপুরের আরশ আলী জানান, তার হারভেস্টার বিকল হয়েছে। ঠিক করার মত কোন ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া যাচ্ছে না।ছাতক উপজেলার রাজারগাঁয়ের ফখরুল হকের হারভেস্টার কোথায় জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উলুতুলু গ্রামের আব্দাই মিয়া তার হারভেস্টার কোথায় আছে বলতে পারেননি।তাহেরপুর মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক সাদেক আলীসহ অনেকেই বলেন, হাওরে ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিক আগে আসলেও এখন একবারে কমে গেছে। এদিকে স্থানীয় ভাবেও শ্রমিক মেলে না। তাই এখন ধান কাটার যন্ত্রের ওপরই ভরসা। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিক নেই আর হাওরেও ধান কাটার মেশিনও নেই। ফলে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে আছি। উপায় না পেয়ে পরিবারের সকল সদসদ্যদেরও নিয়ে ধান কাটার চেষ্টা করছি।শাল্লা ছায়ার হাওরপাড়ের আনন্দপুরের কৃষক রাখাল দাস ও কাশিপুরের বাবলু মিয়া বলেন, কৃষকের নামে ভুর্তুকির ধান কাটার মেশিন নিযয়ে তারা ব্যবসা করেছে। আর আমরা হারভেস্টারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি। ধান কাটার শ্রমিকও মিলছে না। মহাবিপদে পড়ে পরিবারের সবাই মিলে পাকা ধান কাটছি।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, আমি যোগদান করার পর হারভেস্টার যন্ত্রের বিষয়ে কড়া নজরদারী রাখছি। গেল দুই বছর সকল কম্বাইন হারভেস্টার বিধি মোতাবেক কেনা হয়েছে। তবুও এই বিষয়ে খোঁজ-খবর নেব আমি। তিন বছর পর মালিকানা হস্তান্তর করতে পারেন হারভেস্টার যন্ত্রের মালিকরা। সেক্ষেত্রে ভুর্তুকির টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। কৃষি অফিসকে বিষয়টি জানিয়ে হস্তান্তর করতে হবে। কম্বাইন হারভেস্টার সংশ্লিষ্ট এলাকায় নেই, অথচ তালিকায় দেখানো হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান