ফুটবলে সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে মধুপুরের গারো কিশোরীরা
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: চারপাশের বসতিরা সব গারো সম্প্রদায়ের। আনারস কলার মৌ মৌ গন্ধে টালমাটাল। সবুজে বুকেই নিত্য চলাচল। বেশির ভাগই মাটির দেয়াল ঘরে বসবাস করেন। কেউ দিন মজুর, কেউ ঢাকায় চাকরি, ব্যবসা, অফিসে কাজ করেন। কেউ অটোবাইক চালক। কেউবা আবার বাগান বাগিচায় দিন মজুরির কাজ করে সংসার চালান। এমন একটি গ্রামের নাম বেরিবাইদ। এ গ্রামটির নামে হয়েছে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ।এটি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বসবাসরত একটি সুন্দর গ্রাম। এ গ্রামের ৩০ গারো কিশোরী নিয়ে করা হয়েছে ফুটবলের দল। প্রতিদিন ওরা মাঠে নামে। দারুণ খেলে। জেলা ও জেলার বাইরেও যাচ্ছে খেলতে। সুনাম বয়ে আনছে চারদিক থেকে। ওদের চোখে মুখে স্বপ্ন একদিন দেশের মাঠ কাঁপিয়ে বিশ্ব দরবারেও সুনাম কুড়াবে। নেত্রকোনার কলসিন্ধুরের কিশোরী ফুটবলারদের পথেই হাঁটছে মধুপুরের গারো কিশোরী ফুটবল দল।স্থানীয় সংগঠকরা জানান, মধুপুরে গারো ও কোচদের বসবাস। কালসিন্ধুরের মেয়েরা যদি দেশের ফুটবল মাঠ কাঁপাতে পারে তাহলে এ এলাকার মেয়েরাও পারবে। এমন ধারণা থেকে গারো সম্প্রদায়ের বসবাসরত এলাকায় অবস্থিত স্কুলগুলোতে যোগাযোগ শুরু হয়। এক পর্যায়ে বেরিবাইদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেন রিছিল আগ্রহের সাথে টিম গঠনের কাজে এগিয়ে আসেন। ৩০ জনের একটি টিম গঠন করে গত ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নিজেরা করির কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংগঠক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়।কোচ, বুটসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয় ‘নিজেরা করি’। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাঠ সংস্কার গোলকিপারসহ অন্যান্য সহযোগিতা করে।বেরিবাইদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পড়াশোনার পাশাপাশি ওরা সপ্তাহে তিন দিন মাঠে নামে। জার্সি বুট পরে দৌড়ে যায় সাদা কালো ফুটবলের সাথে।গোপালপুর সূতি বিএম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সংগঠক আব্দুল লতিফ জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতা ও পরামর্শে বেরিবাইদ জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে একটি দল গঠন করা হয়। গোপালপুর সূতি বিএম এর মেয়েরাও কয়েকবার দেশ সেরা হয়েছে। মধুপুরের মেয়েরাও দেশ সেরা হবে, এমনটাই প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।বেরিবাইদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেন চিসিম বলেন, তার স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর অধ্যয়নরত ৩০ ছাত্রী নিয়ে এ টিম গঠন করা হয়েছে। নিজেরা করির সার্বিক তত্ত্বাবধানে একজন কোচ সপ্তাহে তিন দিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বয়সে ছোট হলেও মেয়েরা ভালো খেলছে। এর মধ্যে ৫ জন মেয়ে টাঙ্গাইল জেলার হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহে খেলে আসছে।নিজেরা করি'র মধুপুরের সমন্বয়ক মজিবর রহমান বলেন, গত বছর থেকে শুরু এ দলের কার্যক্রম। তবে এপ্রিল মাস থেকে নিজেরা করি সংস্থার তত্তআবধানে একজন প্রশিক্ষক মাসে ১২ দিন প্র্যাক্টিস করায়। তাদেরকে বুট-জার্সি-মোজা-বলসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। এ দল উপজেলা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরব বয়ে আনবে একদিন। নিজেরা করির এ সহায়তা ৫ বছরের বেশি সময় চলবে বলেও তিনি জানান।মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করতে নারী ফুটবল দল ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। সকলের উচিত নারী ফুটবলারদের পাশে দাঁড়ানো।