নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার ভবিষ্যৎ নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে যেখানে দক্ষতা, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের সমন্বয়ে গড়ে উঠছে রপ্তানিযোগ্য নার্সিং শিল্প। আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষে যখন বিশ্বজুড়ে নার্সদের অবদান স্মরণ করা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশে সূচিত হয়েছে এক নতুন যুগের যাত্রা যেখানে নার্সিং পেশাকে একটি কৌশলগত রপ্তানিখাত হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে চিকিৎসক-নার্স অনুপাত ৩:১, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী এটি হওয়া উচিত ১:৩। সেই সঙ্গে, দেশে প্রয়োজনীয় নার্সের ঘাটতি প্রায় ৮২ শতাংশ, যা স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ এবং বৈশ্বিক চাহিদা কাজে লাগানোর জন্য নার্সিং খাতকে রপ্তানিমুখী শিল্পে রূপান্তরের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী।
বিশ্বজুড়ে, বিশেষত উন্নত দেশগুলোতে, দক্ষ নার্সের অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। যুক্তরাজ্যের এনএইচএস-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে ৫০,০০০-এর বেশি নার্সের পদ শূন্য। ইউরোপ, জাপান এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলিতেও জনসংখ্যার বার্ধক্য ও স্বাস্থ্যখাত সম্প্রসারণের ফলে এই চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও তরুণ জনগোষ্ঠীসমৃদ্ধ দেশের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।
এই খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। ঢাকার মহাখালীতে স্থাপিত তাদের হাইটেক সিমুলেশন ল্যাবে ভার্চুয়ালরিয়ালিটি (VR) ও অগমেন্টেডরিয়ালিটি (AR) প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করছে ইউনিভার্সাল নার্সিং কলেজ ও ইউনাইটেড কলেজ অব নার্সিং।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রকল্পে যুক্ত রাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) সহ ইউরোপ ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সরা সরাসরি বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন, যা দেশের জন্য মূল্যবান রেমিট্যান্স আয় এবং দক্ষ মানব সম্পদের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দিতে পারে।
ব্রিটিশ এমপি স্যামট্যারী এই প্রকল্পকে “বাংলাদেশের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক রপ্তানিখাত গড়ে তোলার স্মার্ট মডেল” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অপরদিকে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই উদ্যোগকে “প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবাকে একটি টেকসই উন্নয়নের স্তম্ভে রূপ দেওয়ার উদাহরণ” বলে মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্পের পর নার্সিং খাত হতে পারে বাংলাদেশের পরবর্তী বৈশ্বিক সাফল্যের ক্ষেত্র—যেখানে একদিকে দেশের স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন ঘটবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারিখাত যদি যৌথভাবে এই উদ্যোগকে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে পারে, তবে অদূর ভবিষ্যতে “নার্সিং রপ্তানিকারক দেশ” হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি নতুন পরিচয়ে পরিণত হতেপারে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available