নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে এনডিএম এর অবস্থান ব্যাখা করতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম পার্টি।
২০ মে মঙ্গলাবর বিকের ৪টায় সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, গত ১৭ই মে রাজধানীর লেক-শোর হোটেলে আয়োজিত দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ সভাপতির বক্তব্যে স্পষ্ট করে বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাকে বিদেশী সংস্থার কাছে তুলে দেবার সরকারি পায়তাঁরার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে এবিষয়ে আমাদের বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামক দুটি বিভাগ সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা দৃঢ়ভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে গঠিত আপনাদের সরকারকে আমরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি। বিদেশি শক্তির তাঁবেদারি করলে বা কোন এনজিওর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করলে আপনাদের জন্যও রাজপথের তরঙ্গ সুখকর হবে না।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক বিনা ভোটের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, চট্রগ্রাম-১১ আসনের সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সাংসদ এম এ লতিফ এবং নোয়াখালী-৪ আসনের আরেক আওয়ামী বিনাভোটের সাবেক এমপি একরামুল হক সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার টেক ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের “সুপার পাওয়ার” যা এখনো বহাল রয়েছে। শুরুতে এই প্রতিষ্ঠানটি ছিলো কনটেইনার হ্যান্ডেলিং এর যন্ত্রপাতি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে যারা পরবর্তীতে বাগিয়ে নিয়েছিলো সিসিটি এবনং এনসিটির টার্মিনাল পরিচালনার কাজ। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ইংল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি), পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), চট্টগ্রাম বন্দরের ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম বন্দরের যন্ত্রপাতি রক্ষাণাবেক্ষণ ও সরবরাহের একচেটিয়া কাজ পায়।
আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, অবিলম্বে সাইফ পাওয়ার টেকের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির তদন্ত করতে এবং প্রতিষ্ঠানটির একচেটিয়া দখল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে মুক্ত করে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজ মানসম্পন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তর করতে।
যেই পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে দেয়া হয়েছে সেই একই পদ্ধতিতে এনসিটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে তুলে দেবার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে আমরা এই ষড়যন্ত্র রুখে দিব ইনশাআল্লাহ্ । এই টার্মিনালের পাশেই বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সামরিক ঘাঁটি থাকায় এদধরণের উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। বিদেশী অপারেটর দিয়ে এই টার্মিনাল পরিচালনা করলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আয় অর্ধেকে নেমে আসবে।
এই টার্মিনাল দিয়ে দেশীয় অপারেটররা ধারণ ক্ষমতা থেকে প্রায় ২ লাখ অতিরিক্ত কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর কাজ করতে সক্ষম। তাহলে কার স্বার্থে সরকারের আত্মঘাতী এবং একগুঁয়েমি এই সিদ্ধান্ত? এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সরকার কি হাসিনার মত গুলি চলাবে? চীনের ব্যবস্থাপনায় শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের উদাহরণ আমাদের মনে আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা “রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ” তাঁদের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে আমরা মনে করি। একটি নির্বাচিত সংসদ ছাড়া সরকারের রাজস্ব সংক্রান্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত বর্তমান অনির্বাচিত সরকার গ্রহণ করতে পারে না। রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন থেকে শুরু করে ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থি উদ্যোগসহ বিতর্ককে উসকে দেয় এমন সব বেহুদা কাজেই বর্তমান সরকার বেশি সময় ব্যয় করছে বলেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
মধ্যরাতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলত বিশ্বব্যাংককে খুশি করার জন্য। এনবিআর সংস্কারে সরকার দেশের যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে পরামর্শক কমিটি গঠন করলেও তাঁদের প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় নাই। এনবিআর রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ বলে সরকার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তার দায়ভার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠানটির নয়। বিগত দিনগুলোতে সরকারের উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা, এনবিআর এর সক্ষমতা এবং লোকবল বৃদ্ধি না করে, ট্যাক্স-জিডপি অনুপাত বাড়াতে না পারা, কর ফাঁকি দেবার সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয় এর সাথে জড়িত।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় নির্বাচনের সময়কে প্রলম্বিত করে দেশের মানুষদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমনসব পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা এই সরকারকে শেষ পর্যন্ত সহযোগিতা করতে চাই তবে সরকার যদি বিদেশিদের সন্তুষ্ট করার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে তাহলে বাংলাদেশ আরেকটি গণ-আন্দোলনের সাক্ষী হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম প্রস্তাব করছে অর্থমন্ত্রনালয়ের অধীনে প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ এবং পরিকল্পনা বিদের সমন্বয়ে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন সেল গঠন করতে হবে। আর্থিকখাত সংক্রান্ত সকলের সাথে নীতিগত আলোচনা এবং নিয়মিত গণশুনানি আয়োজনের মাধ্যমে এই সেল রাজস্ব নীতিমালা প্রণয়নে সুপারিশমালা তৈরি করবে এবং জনগণের মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে আপলোড করবে।
রাজস্ব আদায়ের মূল দায়িত্ব এবং এখতিয়ার এনবিআর এর অধীনেই ন্যস্ত থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা বা সংবিধানে বর্ণিত ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগের মাধ্যমে এনবিআর আর রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমের সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করতে হবে।
এনবিআর এর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগকে আরও কার্যকর এবং বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, কারিগরি সক্ষমতা এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।
একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়িত হতে হবে বলেই আমরা মনে করি।
দলটির বনানীর নিজস্ব কার্যালয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম কথাগুলো তুলে ধরেন।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম, উচ্চ পরিষদ সদস্য হুমায়ূন পারভেজ খান, ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক উজ জামান চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, দপ্তর সম্পাদক জাবেদুর রহমান, নির্বাহী সদস্য নাইজেল মেন্ডিস সহ নেতৃবৃন্দ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available