তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি: আজ ৭ মে শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কলেজ সরকারি তিতুমীর কলেজ ৫৮ বছরে পা রাখল। ১৯৫৮ সালের ৭ মে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠার সময় কলেজটি ‘জিন্নাহ কলেজ’ নামে পরিচিত ছিলো। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ হওয়া বীর সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীরের নামে নামকরণ করা হয়।
১১ একরের সুবিস্তীর্ণ জায়গায় হাজারো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত এই প্রতিষ্ঠান ঢাকার মহাখালী এলাকায় অবস্থিত। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ’২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। এ কলেজের কৃতী, মেধাবী ও যশস্বী শিক্ষার্থীদের অনেকেই আজ স্বনামখ্যাত। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা কলেজকেও করেছেন গৌরবান্বিত।
যদিও প্রতিষ্ঠার সময় কলেজটিতে শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ক্লাস নেওয়া হতো। পরে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কলেজটিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে ২০১৭ ঢাকা শহরের স্বনামধন্য সরকারি সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজও ছিলো। পরবর্তী ২০২৫ সালে ঢাবি অধিভুক্ত বাতিল করা হয় এবং সাতটি কলেজ নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান জগন্নাথ কলেজের ছাত্র আন্দোলনকে নির্মূল করার জন্য মহাখালীতে অবস্থিত ডিআইটি খাদ্যগুদাম হিসেবে পরিচিত ভবনে জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখা স্থানান্তর করেন। এর নামকরণ করা হয় জিন্নাহ কলেজ। পরে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান রেডিও-টেলিভিশনে এক ভাষণে জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে জিন্নাহ কলেজ শাখার ছাত্র সংসদের প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি) সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে টিপু মুনশি ও শাহাবুদ্দিনসহ তৎকালীন কয়েকজন ছাত্রনেতা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জিন্নাহ কলেজের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। তখন আনিসুজ্জামান খোকন (জিন্নাহ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক) জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ প্রস্তাব করেন এবং তার আরেক সহযোদ্ধা ‘সূর্যসেন কলেজ’ নাম প্রস্তাব করেন।
২ মার্চ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় জড়ো হয়ে সেখানে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রবকে বিষয়টা অবহিত করলে তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জিন্নাহ হল’ এর নাম পরিবর্তন করে ইতিমধ্যে ‘সূর্যসেন হল’ রাখা হয়েছে। তাই তার পরামর্শক্রমে অবশেষে জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ হিসেবে চূড়ান্ত হয়। ওই রাতেই ‘তিতুমীর কলেজ’ নামকরণের সাইনবোর্ড লেখা হয় এবং দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া হয়। এলাকার কিছু যুবকও কলেজের নাম ‘তিতুমীর’ করার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
বর্তমানে সরকারি তিতুমীর কলেজে তিনটি অনুষদে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে মোট ২২টি বিভাগে স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
এছাড়াও কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আবাসিক ছাত্রাবাসের সুবিধা। নতুন-পুরোনো মিলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক পাঁচটি হল। ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বিআরটিসি লাল বাস: সম্পর্ক, অগ্নিবীণা, সোনার তরী, সাদা বাস, চলন্তিকা, সৌহার্দ্য, মতিউর রহমান এবং অনিন্দ্য।
বর্তমানে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর ড. ছদরুদ্দীন আহমদ এবং উপাধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available