শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পাওনা টাকা আদায় করতে গেলে মহিষ চুরির অপবাদ দিয়ে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের এক সপ্তাহ পর ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়েছে।
মারধরের পর সালিশি বৈঠকে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বজনদের সই স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয় অভিযুক্তরা। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে দুদফা মারধরের শিকার হয়েছে দাবি স্বজনদের।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি।
২৩ মে শুক্রবার সকালে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পোষাদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৭ মে) মারধরের ঘটনা ঘটে।
নিহত আনোয়ার হোসেন (৫০) উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পোষাইদ গ্রামের মো. সাইদুর রহমানের ছেলে।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার বরমি ইউনিয়নের পোষাদিয়া গ্রামের মো. কাজল মিয়া (৪০), শাহিন (২২), কবির হোসেন (৩৪) ও আকরাম হোসেন (৩৫)।
ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেনের ছেলে রিয়াদ হোসেন বলেন, বাবা একজন সহজসরল মানুষ ছিল । খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। অভিযুক্ত কাজল বাবার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়েছে। পাওনা টাকা চাইতে পরপর কয়েকদিন তাদের বাড়িতে যায় বাবা। কিন্তু কাজল টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করে। এই ক্ষোভে বাবা আমাদের বাড়ির পাশে বেঁধে রাখা কাজলের একটি মহিষ নিয়ে রওনা করে। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে কাজল খবর পেয়ে দৌড়ে এসে বাবাকে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। অভিযুক্ত কাজলের ছেলে শাহিন বাবাকে মারতে মারতে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে অভিযুক্ত কাজলের ছেলে শাহিন বাবার বুকে আঘাত করে। এরপর আমাদের খবর দিলে আমরা তাদের বাড়িতে গেলে সালিশি বৈঠক বসে। জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর নিয়ে বাবাকে আমাদের হাতে তুলে দেয়। এরপর বাবার চিকিৎসা করি। বাবা শুধু বলতেন বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। আজ বাবা মারা গেছে। আমরা তাদের হুমকির ভয়ে বাবাকে ভালো চিকিৎসাও করতে পারিনি। বাবা মৃত্যুর আগে সবকিছু বলে গেছে। আমি বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়টি সঠিক। এর জেরে পাশের মাঠে বেঁধে রাখা কাজলের মহিষ নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এটা হয়তোবা ভয় দেখানোর জন্য। চুরি করা তো তার উদ্দেশ্য না, তিনি চোর না। এরপর কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে কাজল খবর পায় আনোয়ার হোসেন মহিষ নিয়ে যাচ্ছে। এমন খবর পেয়ে কাজল ও তার লোকজন এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। শুনছি হালকা মারধর করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, নিহতের ছেলে আমাকে ফোন করে জানায় কাজলের সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে আপনি একটু আসেন। এরপর আমি কাজলের বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি কাজলের জামাকাপড় ছেঁড়া, শরীরে কাঁদা মাখা। পরবর্তীতে জানতে পারি আনোয়ার হোসেন কাজলের কাছে ৬০ হাজার টাকা পাবে। সেই কারণে মহিষ নিয়ে রওনা করলে ওরা ধরে আনে। এরপর সালিশি বৈঠক বসে সমাধানের পর আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে যায় তার স্বজনরা। কেমন মারধর করছে এটা তো আমি বলতে পারব না। মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা এটাও বলতে পারবো না।
অভিযুক্ত কাজল মিয়া বলেন, সে আমার কাছে ৬০ হাজার টাকা পাবে এটা সঠিক। আমি টাকা দিয়ে দিব বলছি। এই বলে বাড়ি থেকে চলে গিয়ে মাঠে বেঁধে রাখা মহিষ নিয়ে রওনা হয়। আমরা দৌড়ে গিয়ে তাকে আটক করি। মারধর করিনি। এটি মিথ্যা অভিযোগ। এরপর সালিশ বৈঠক বসে ওখানেই সমাধান হয়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গত এক সপ্তাহ পূর্বে পাওনা টাকা ও মহিষ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে। সে বিষয়ে সালিশ বৈঠকে মীমাংসা হয়। ভুক্তভোগী মারা যাওয়ার পর অভিযোগ করছে মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available