মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. একেএম মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে একটি পূর্ণাঙ্গ 'জার্মপ্লাজম সেন্টার' স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্দিষ্ট এলাকাতে তিনি এই সেন্টারটি গড়ে তুলতে চান, যেখানে সংরক্ষিত থাকবে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ, বিপন্নপ্রায় ও ঔষধি গাছপালা। একইসাথে, এই সেন্টারটি গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করবে এবং ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
উদ্ভিদের ভাণ্ডার গড়ে তুলতে চাওয়া গবেষক ড. একেএম মহিউদ্দিন বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি উদ্ভিদেরই কোনো না কোনো ঔষধি গুণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমলকিতে এমন কিছু উপাদান পাওয়া গেছে যা আট ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়াকে দমন করতে সক্ষম। অন্য অনেক গাছের নির্যাসেও এমন গুণাবলী পাওয়া গেছে, যা আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।’
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় তিন ধরনের গাছ শনাক্ত করা গেছে, যেগুলোর রাসায়নিক উপাদানে অ্যান্টি-ব্লাড ক্লটিং (রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধী) বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলোর ওপর আরও গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন কোনো ওষুধ উদ্ভাবনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ড. মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমি অনেকদিন ধরেই এই উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ফার্মেসি বিভাগের সহযোগিতায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পেছনে বেশ কিছু ঔষধি গাছ রোপণ করেছি। ভবিষ্যতে এই গাছগুলো আমাদের জার্মপ্লাজম সেন্টারের ভিত্তি হয়ে উঠবে।’
তিনি জানান, ‘বর্তমানে উদ্ভিদের ফাইটোকেমিক্যালস নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে। আমাদের সম্ভাবনাময় অনেক উদ্ভিদ ইতোমধ্যে বিলুপ্তির পথে। আজ যে সব গাছের গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারছি না, ভবিষ্যতে তাদের মূল্য অনন্য হতে পারে। তাই সময় থাকতে এদের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ জরুরি, তখন অন্তত জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে সেগুলোর জিনগত উপাদান বা চারা পাওয়া যাবে।’
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি শুধু গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, ক্যাম্পাসের পরিবেশ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ড. একেএম মহিউদ্দিন বলেন, ‘এই সেন্টারের মাধ্যমে গবেষকদের প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ সহজলভ্য হবে, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সংরক্ষণ সম্ভব হবে এবং পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিবেশ হবে আরও সবুজ, প্রাণবন্ত ও দৃষ্টিনন্দন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে, অধ্যাপক মহিউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে গাছের বাউন্ডারি করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে গাছের বাউন্ডারি করার জন্য বিরুৎ জাতীয় কাঁটা মেহেদি গাছ ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ভেতরে বেলি ও রঙ্গন জাতীয় ফুলগাছ লাগালে একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available