শাফি উদ্দিন আহমদ: জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি উঠেছে দফায় দফায়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই দাবি জানিয়ে আসছিল।
সর্বশেষ ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার না হওয়া নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের পর গত রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণহত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাকর্মীর নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে শুরু থেকে বিএনপি দূরত্ব বজায় রাখলেও জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, লেবার পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ জুলাই অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন খোলাখুলি সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়।
তবে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যম সারির নেতা এবং কর্মী-সমর্থক ব্যাপক সংখ্যায় অংশ নিলেও, দলটি আগের দু’দিন আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানায়নি। গতকাল রাত ১০টার দিকে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেসবুক পোস্টে জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জনতা দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবে। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি শাহবাগে গিয়ে উল্লাসকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
আগের রাতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বিকেলে শাহবাগে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে হয় গণজমায়েত। একই দাবিতে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় একই কর্মসূচি পালন করা হয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি আদায়ে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে এলাকায় আগের রাতে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হলেও, এনসিপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের আহ্বানে তা তুলে নেওয়া হয়।
নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের বিরোধী বিএনপির সমমনা দলগুলোও সরাসরি শাহবাগে যোগ দেয়নি। গত আগস্ট থেকেই বিএনপি আইন সংশোধনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, এখন যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলছে, কয়েক দিন পর তারাই যে বিএনপিকে নিষিদ্ধের দাবি করবে না, নিশ্চয়তা কী!
চট্টগ্রামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৮ কোটি মানুষের কেউ আওয়ামী লীগকে চায় না।
তবে এ বিষয়ে শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার চাইলে আইন-আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে।
এছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি যতটা না আইনগত, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বিষয়। তাই রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের মতৈক্য প্রয়োজন। নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সংকটের সমাধান করবে না।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available