জ. ই বুলবুল : শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। মাসটি বছরের অন্যান্য সময়ের মতো নয়। এ সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। যেহেতু সারা বছরের রুটিনের সঙ্গে মিল নেই, তাই সবটা সামলে উঠতে অনেকেরই সময় লেগে যায়। অতিরিক্ত কাজের চাপে ইবাদাতেও বিঘ্ন ঘটে অনেকের। আপনি একটু কৌশল করে নিলেই পুরো রমজান মাসজুড়ে থাকতে পারবেন চাপমুক্ত। সময়ের কাজ সম্পন্ন হবে সময়েই।
রোজার জন্য যে প্রস্তুতিগুলো নিয়ে রাখবেন
বাজার-সদাই: রমজানে দু’বেলা মূল খাবার। সন্ধ্যায় ইফতার ও ভোররাতে সাহরি। এই দু’বেলা খাবারের জন্য বাজারটা করে রাখতে হবে আগেই। রোজা রাখার কারণে দিনের বেলা ক্লান্তি লাগাটা স্বাভাবিক। তাই রোজা রেখে খুব বেশি কাজও করা সম্ভব হয় না। সে কারণে আগেভাগে বাজার করে রাখতে পারলে রোজার সময় কষ্ট করতে হবে না। তাই রমজানে কোন খাবারগুলোর দরকার হবে তা মনে করে একটি তালিকা তৈরি করুন। সেই অনুযায়ী, বাজার করে ফেলুন। এতে কষ্ট কম হবে এবং সময়ও বাঁচবে। তবে খেয়াল রাখবেন, অতিরিক্ত কেনাকাটা যেন না হয়।
গুছিয়ে রাখা: বাজার কেনার কাজ শেষ হলে গুছিয়ে রাখার পালা। কখন কোন খাবারটি প্রয়োজন হবে, সেগুলো সেভাবে গুছিয়ে রাখুন। যেন প্রয়োজনের সময় সব হাতের কাছে পাওয়া যায়। এলোমেলো ছড়িয়ে রাখলে পরবর্তী সময়ে আপনারই কষ্ট হবে খুঁজে বের করতে। তাই বাজার করার পর গুছিয়ে রাখাও জরুরি। কিছু জিনিস থাকে যেগুলো দ্রুত নষ্ট হতে পারে, সেগুলোও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিষ্কার করা: এটি একটি বড় কাজ। যদিও আমরা তা বুঝতে পারি না। সুস্থ থাকার জন্য সবকিছুর পরিচ্ছন্নতা জরুরি। রোজা রেখে বাড়ি-ঘর, কাপড় ইত্যাদি পরিষ্কার করতে কষ্ট বেশি হতে পারে। তাই আগেভাগেই পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো সেরে নিন। যে জিনিসগুলো রোজার মাসে বেশি প্রয়োজন হবে, সেগুলো পরিষ্কার করে রাখুন। সবকিছু পরিষ্কার থাকলে আপনার মনও সতেজ থাকবে। ইবাদাতে মন দেওয়া সহজ হবে।
কাজ এগিয়ে রাখা: ইফতারে নানা রকম খাবার খাওয়া হয় নিশ্চয়ই। সেজন্য কিছু কাজ আগেই এগিয়ে রাখতে পারেন। যেমন- বিভিন্ন ফ্রোজেন আইটেম তৈরি করে রাখতে পারেন ইফতারে খাওয়ার জন্য। শরবত তৈরির জন্য সিরাপ তৈরি করে রাখতে পারেন। এতে ইফতারের সময় তাড়াহুড়া লাগবে না। খুব সহজেই কাজ শেষ করতে পারবেন। রমজানেও আপনি থাকতে পারবেন চাপমুক্ত।
শিশুর জন্য: শিশুরা তো বড়দের মতো নয়। তাদের জন্য রোজা রাখার বাধ্য-বাধকতাও নেই। তাই রমজান মাসেও শিশুর খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয়। আপনি রোজা রাখছেন বলে শিশুর খাবারের প্রতি উদাসীন হবেন না। এতে সে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হতে পারে। শিশু রোজায় কী খাবে, তা আগেভাগেই চিন্তা করে রাখুন। সেই অনুযায়ী বাজার করা এবং তার খাবারগুলো গুছিয়ে রাখার কাজটিও আগে সেরে নিতে পারেন। এতে রোজায় আপনাকে ধকল কম সামলাতে হবে।
রোজা রেখে নিজেকে সুস্থ রাখবেন যেভাবে
সেহরি, ইফতার, নামাজ ও রোজা রাখার জন্য এ মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে। সেই নিয়মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য কিছু নিয়মকানুনও মেনে চলতে হয়।
সেহরিতে যা খাবেন: দিনের শুরু হয় সেহরি দিয়ে। সেহরির খাদ্যতালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ, আঁশযুক্ত, সুষম, দ্রুত হজম হয়ে যায় এমন খাবার রাখুন। একই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করা উচিত। সেহরিতে আদর্শ খাবার হচ্ছে- আঁশযুক্ত খাবার গম বা গম থেকে তৈরি খাবার, রুটি, শাকসবজি, ফল, বাদাম ইত্যাদি। লক্ষ্য রাখতে হবে, সেহরির খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার যেন থাকে। যেমন- ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত মাংস বা মাছ, ভাত বা রুটি, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি। সম্পূর্ণ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সেহরির খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন- সিদ্ধ ডিম ১টি, কমলা বা কলা ১টি, রুটি ২টি বা ভাত ১ কাপের মতো, শাকসবজি এক বা একাধিক প্রকার, লো ফ্যাট মিল্ক ১ গ্লাস।
সেহরিতে এড়িয়ে চলা উচিত যা: সেহরিতে ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার, মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ ও অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া উচিত নয়। যারা ধূমপান করেন, তারা এ মাসে ত্যাগ করতে পারেন।
ইফতারে যা খাবেন: স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ইফতারের খাবার ঘরেই তৈরি করে নিন। একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন ইফতারের টেবিল যা দিয়ে সাজাতে পারেন, তা হলো- ইফতারে খেজুর একটি আদর্শ খাদ্য হতে পারে। সারাদিনের দুর্বলতা দূর করতে ও শরীর সুস্থ সবল রাখতে খেজুর উত্তম খাবার। খেজুর খেয়ে রোজা খুলে তারপর পরিমাণ মতো পানি পান করে নিন। টাটকা সবজিতে ভরা এক বাটি উষ্ণ স্যুপ রাখুন ইফতার তালিকায়। স্যুপ একদিকে যেমন পানির অভাব পূরণ করবে, অন্যদিকে পাকস্থলী সুস্থ রাখবে ও খাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে। ইফতারে বেশি করে সালাদ খেতে পারেন। সাথে সমার্থ অনুযায়ী ফল রাখা যেতে পারে।
যা এড়িয়ে চলবেন: ইফতারে হঠাৎ করে অনেক কিছু খাওয়া সমীচীন নয়। ইফতারের পর চা, কফি ও সোডাজাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার খাবেন না। এগুলো বুকজ্বালা ও বদহজমের কারণ হতে পারে। সেহরিতে অতিরিক্ত লবণজাতীয় খাবার, যেমন- আচার, সল্টেড বিস্কিট ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়। সেহরিতে অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার খেলে বেশি পিপাসা পায়। সেহরিতে অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
লেখক : স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক, নিবন্ধকার ও সংবাদকর্মী।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available