ইবি প্রতিনিধি: জন্ম থেকেই দুই হাত। কিন্তু সাফল্য থেকে পিছপা হয়নি একটুও। হাত না থাকলেও বাম পা দিয়ে লিখেই সাফল্যের সাথে দাখিল ও আলিম পরীক্ষার গণ্ডি পার করেছে সে। ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা স্বপ্নপূরণে যে কোনো বাঁধা নয় তার প্রকৃত উদাহরণ রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার হেমায়েতপুর গ্রামের হাবিবুর। হাবিবের বাবার নাম আবদুস সামাদ এবং মা হেলেনা খাতুন। চার সন্তানের মধ্যে হাবিব মেজো।
৫ জুন সোমবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) স্বতন্ত্র অনুষদ 'ডি' ইউনিট (ধর্মতত্ত্ব) এর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন হাবিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের ১০৩ নম্বর কক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় হাবিবের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। হলের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের সহায়তায় হাবিবকে পা দিয়ে লিখানোর বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় হাবিবুরের সাথে। এশিয়ান টিভি অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার জন্ম থেকেই হাত নেই। তবে এই কারণে আমি নিজেকে কখনো পিছিয়ে পড়া মানুষদের তালিকায় ধরিনি। ছোটবেলা থেকেই নিজের এই প্রতিবন্ধকতা মেনে নিয়েছি। আল্লাহ আমাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন আমি ঠিক অইভাবেই নিজেকে মেনে নিয়েছি। মা-বাবা, ভাই-বোন আমাকে ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রাণিত করেছে। মা-বাবার অনুপ্রেরণায় আমি ২০২০ সালের দাখিল পরীক্ষায় ৪.৫৬ এবং ২০২৩ সালের আলিম পরীক্ষায় ৪.৫৭ পেয়ে পাশ করেছি।
হাবিবুরের স্বপ্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের যেকোনো বিষয়ে পড়তে আগ্রহী। উচ্চশিক্ষা শেষ করে হাবিবুর দেশসেরা একজন আলেম হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তার মতো যারা নানা সমস্যায় সম্মুখিন তাদের উদ্দেশ্যে হাবিবুর বলেন, আমার মতো যারা নানা সমস্যার সম্মুখীন তারা যেনো হীনমন্যতায় না না ভুগে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। চেষ্টা করলে অনেক কিছুই সম্ভব। কষ্ট হবে, বিপদ আসবে সংগ্রামের মাধ্যমে এটিকে জয় করতে হবে।
পরীক্ষার হলে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে হাবিবুর বলেন, আমার পা থেকে মাঝে মাঝে কলম পড়ে গেছে তবে স্যার মেডামরা অনেক সহযোগিতা করেছে। তারা আমাকে চেয়ার টেনে দিয়ে আলাদা ভাবে লিখার ব্যবস্থা করেছে। সেজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
হাবিবুরের সাথে আসা তার এলাকার চাচা আজমাল হোসেন বলেন, হাবিবুরের লেখাপড়ার আগ্রহ এবং ওর অগ্রগতি নিয়ে আমরা এলাকার মানুষ ভীষণ খুশি। আমরা ওকে নিয়ে গর্ব করি।
এবিষয়ে পরীক্ষাকক্ষের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকা আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল বলেন, ছেলেটি একজন অদম্য জীবন যোদ্ধা। আমরা পরীক্ষা হলে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available