নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষ শক্তি নিয়ে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, আমার উপলব্ধি হচ্ছে-জুলাই এখনো শেষ হয়নি। এটি কেবল একটি সময় নয়, এটি একটি সংগ্রামের সীমান্ত, যা প্রতিদিন রক্ষা করতে হয়। যারা জুলাইয়ের বিপক্ষে ছিল, তারা এখনো হারিয়ে যায়নি। তারা দেখছে। অপেক্ষা করছে। হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে শফিকুল আলম শনিবার এসব কথা লেখেন।
শফিকুল আলম লিখেছেন, প্রায় ৯ মাস আগে, যখন আমি এএএফপি থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন সরলভাবে ভেবেছিলাম এটি কেবল একটি ক্ষণিকের বাঁক—মেয়াদ শেষ হলে আবারও সাংবাদিকতায়, গল্প বলার জগতে ফিরে যাব। প্রথম কয়েক সপ্তাহ আমি সেই বিশ্বাস আঁকড়ে ধরেছিলাম। নিজেকে বুঝিয়েছি—শিরোনাম আর বাইলাইনগুলোর জগৎ এখনো আমার নাগালের মধ্যেই আছে। কিন্তু সেই সরলতা এখন চূর্ণবিচূর্ণ।
এএফপি থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব পদে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি আরও লেখেন, এটি এখন আর কেবল পেশাগত পরিবর্তন নয়। এটি এখন এক যুদ্ধ—দুটি ভিন্ন বাংলাদেশ ভাবনার মাঝে এক সংগ্রাম। একদিকে একটি গণতান্ত্রিক, মুক্ত ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন। আর অন্যদিকে—একটি লুটেরা, বংশগত, চেতনাবাজি শাসনব্যবস্থা, যারা তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত অতীতের ভূত আঁকড়ে আছে। ভুল করো না—তুমি যেই মুহূর্তে বিশ্রাম নেবে, ভাববে লড়াই শেষ—ওরাই ফিরে আসবে। সহিংসতা নিয়ে, প্রোপাগান্ডা নিয়ে, বিষাক্ত ভাষা নিয়ে।
ফ্যাসিস্টদের সুযোগ দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত করে শফিকুল আলম আরও লেখেন, তাদের আছে ‘ল্যাসপেনসার’—তাদের অনুগত লেখক, ভাষ্যকার, ইতিহাস বিকৃতিকারক। তারা অপেক্ষা করছে, কখন রাস্তাগুলো খালি হবে, তখনই তারা দখল নেবে। কিন্তু আমি শিখেছি: কখনোই রাস্তাগুলো ছেড়ে দেওয়া যাবে না। শুধু বাস্তব রাস্তা নয়—চিন্তার রাস্তাও না।
বিপ্লব পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি লেখেন, যে কোনো বিপ্লব-পরবর্তীতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সত্যকে রক্ষা করা। কারণ তুমি যদি না রক্ষা করো, প্রতিপক্ষ ঠিকই তাদের মিথ্যা দিয়ে তা ভরে ফেলবে। বিহারিদের পরিণতি দেখো। হ্যাঁ, মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু বিহারি রাজাকার ছিল। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ বিহারি সাধারণ মানুষ, যারা ছিল সংঘাতের মাঝে আটকে পড়া—নিহত, বঞ্চিত এবং চিরকাল নীরব। জেনেভা ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম আজও বড় হয় লজ্জা আর নিঃসঙ্গতা নিয়ে—নিজেদের গল্প বলার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়ে।
জীবন আমাকে যেখানেই নিয়ে যাক, একটি বিষয় নিশ্চিত: আমি রাস্তাগুলো ছাড়ব না। জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমি কথা বলা থামাবো না। ২০০৯ থেকে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত দীর্ঘ অন্ধকার সময়ের—ডিজিটাল দাসত্ব, দমন-পীড়ন ও ভয়ের—সত্যগুলো বলা থামাবো না।
শফিকুল আলম লেখেন, নতুন বাংলাদেশের জন্য এই লড়াই শুধু রাজনৈতিক নয়। এটি ব্যক্তিগত। এটি অস্তিত্বের প্রশ্ন। এটি আমার জীবনের বাকিটা সময়কে গড়ে দেবে। আর এই লড়াই আমি হারতে পারি না, হারব না।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available