নীলফামারী প্রতিনিধি: মাহেরীন চৌধুরী অনেক ভালো মানুষ ছিলেন, সে যখন বাচ্চাদের বের করতে যায় সেসময় সে কিছু বাচ্চা বের করে নিয়ে আসছিলেন পরে সে আবার কিছু বাচ্চা বের করতে গিয়ে আটকে পড়ে। বাচ্চাদের বাঁচাতে গিয়ে পুরো শরীর আগুনে পুড়ে যায় মাহেরীনের।
‘আমার সঙ্গে রাতে আইসিইউতে তার শেষ কথা হয়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেন এই কাজ করতে গেলা? সে আমাকে বলে আমার বাচ্চারা আমার সামনে পুড়িয়ে মরছে সেটা আমি কীভাবে দেখি। আমি সেখানে যাদেরকে বাঁচিয়েছি তারাও আমার সন্তান।’ কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব কথা বলছিলেন ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিদদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল।
২২ জুলাই মঙ্গলবার নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়ী রাজারহাট চৌধুরী পাড়া এলাকার নিজ গ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহেরীন চৌধুরী জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী রাজারহাট চৌধুরী পাড়া এলাকার মৃত মহিতুর রহমান চৌধুরীর মেয়ে ও দুই সন্তানের জননী। মাহেরীন চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমার সবকিছু দিয়ে তাকে আমি বাঁচাতে চেয়েছি কিছুতেই তাকে বাঁচাতে পারিনি। সে আমাকে বলেছে, আমি কিছু বাচ্চাকে বের করতে গিয়েছিলাম, তখন পুরো শরীরে আগুন লেগে যায়। পুড়ো শরীর পুড়ে গিয়েছিলো। আইসিইউতে যখন তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো আমি সেখানেই তার সঙ্গে দেখা করি। লাইভ সাপোর্টে যাওয়ার আগে তার ডান হাতটা দিয়ে আমাকে বলেছিলো আমার হাতটা একবার ধরবে। আমি শক্ত করে ধরেছি কিন্তু ধরে রাখতে পারিনি পুরো শরীর পোড়া। সে আমার হাতটা তার বুকে নিয়ে বললো, তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। এরপর তাকে নিয়ে যায়, সে আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। আমার দুটা বাচ্চা আছে ছোট ছোট, তারা এতিম হয়ে গেলো।
আরও বলেন, আমি তাকে আরও জিজ্ঞেস করলাম তুমি তোমার বাচ্চাদের কথা একবার ভাবলে না। সে বলেছিলো ওই বাচ্চাগুলোও আমার বাচ্চা ছিলো। আমি তাদের একা রেখে কীভাবে চলে আসি। আমি তাকে সর্বোচ্চ দিয়েও বাঁচাতে পারিনি। এর থেকে দুঃখের কিছু হয় না, তাকে ছাড়া আমি কীভাবে বাঁচবো।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অগ্নি দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। ওই ভয়াবহ মুহূর্তে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজে প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available