• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ দুপুর ১২:০৫:২৯ (29-Mar-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ দুপুর ১২:০৫:২৯ (29-Mar-2024)
  • - ৩৩° সে:

সারাবাংলা

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন

৪ জুন ২০২৩ বিকাল ০৪:১৭:৫৯

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন

হানিরপার গ্রামের মনির হেসেনের হারিকেন

সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: বাংলায় একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে -তোমায় হেরিকেন জ্বালিয়েও খুঁজে পেলাম না। বাঙালি সংস্কৃতিতে হেরিকেনের গুরুত্ব এ প্রবাদ থেকে সহজেই অনুমেয়। শৈশবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রামে একমাত্র আলোর উৎস ছিলো কুপি বাতি এবং হারিকেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে সে কুপি বাতি আর হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে। কেরোসিনের জ্বালানিতে হেরিকেনের আলোয় গ্রামাঞ্চলে রাত-বিরাতে বিয়ে-শাদি, যাত্রাগান, জারিগান, মঞ্চ নাটক, ওয়াজ-মাহফিলের মতো অনুষ্ঠান হতো। সে সময় হারিকেনের আলোয় বাড়ির উঠানে কিংব ঘরের বারান্দায় ভাই-বোনরা মিলে গোল হয়ে পড়তে বসতো। 
হারিকেনের জ্বালানি কেরোসিন আনা হতো কাচের শিশিতে ভরে। যেটি রশি দিয়ে বেধে টানিয়ে রাখা হতো ঘড়ের কোনে। সন্ধ্যার আগেই হারিকেনের চিমনি মুছে তেল ভরে জ্বালানো হতো। পরিবারের ছোটদের উপর দায়িত্ব পরতো চিমনি মোছা কিংবা তেল ভরার।

হারিকেনে আনারসের মত দেখতে কাচের চিমনির নীচের অংশে থাকে টিনের তৈরি তেলের ট্যাংক। যেখানে কেরোসিন তেল ঢেলে ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। মাঝখানে থাকে একটি ফিতে, যেটি তেলের ট্যাংকে চুবানো থাকে। আগুনের আচ বাড়াতে-কমাতে চাইলে এই ফিতে উপরে উঠালে বা নিচে নামালেই হয়ে যায়। চাদপুরের মতলবে হেরিকেনের এই ফিতেকে বলা হয় শৈলতে। দিয়াশলাইয় দিয়ে একবার আগুন জ্বালিয়ে দিলেই হতো । পরের কাজ শুধু তেলের ট্যাংকের পাশে থাকা রেগুলেটর দিয়ে আলো বাড়ানো বা কমানো।

৯০ এর দশকে জন্মনেয়া অনেকেই এখনও হারিকেনের মিটমিট আলোয় পথ চলার স্মৃতি নিয়ে নষ্টালজিক হন। রাতে এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় যেতে, হাট-বাজার বা চলাচলে হারিকেন ছিলো একমাত্র আলোর উৎস। একসময় ডাক পিয়নরা হেরিকেনের আলোয় পিঠে চিঠির বোঝা নিয়ে ছুটতেন এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। দেশ বরেন্য অনেককেই আমরা হেরিকেনের কথা উঠলেই স্মৃতি কাতর হতে দেখি।

বিদ্যুতের সহজলভ্যতায় একসময়ের অপরিহার্য এ হেরিকেন এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানেও হারিকেনের জায়গা দখল করে নিয়েছে সৌর বিদ্যুতের আলো কিংবা চার্জার লাইট। গ্রামাঞ্চলে এখনও দু-এক বাড়িতে হারিকেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেগুলো এখন আর ব্যবহার করা হয় না।

হেরিকেন নিয়ে কথা হয় মতলব উত্তর উপজেলা জোড়খালী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম রসুল মিয়াজীর সাথে। তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমরা ল্যাম্প কিংবা হারিকেনের আলোয় লেখাপড়া করেছি। বাতাসের ঝাপটায় কতবার ল্যাম্পের আলো নিভে গেছে। আবার দিয়াশলাই কিংবা চুলার আগুনে পাটকাঠি দিয়ে আলো জ্বালিয়েছি। তিনি আরও বলেন, তখন হারিকেনের আলো মৃদু হলেও তা আমাদের চোখের কোন সমস্যা করতো না। কিন্তু এখনকার বিদ্যুতের বাল্বে শিশু ও বয়স্কদের চোখে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকেন এখন আমাদের কাছে শুধুই স্মৃতি। নতুন প্রজন্মকে একসময় হয়তো হারিকেন সম্পর্কে জানতে, পড়তে হবে ইতিহাস। এক সময় হয়তো হারিকেনেরে দেখা মিলবে আমাদের দেশের জাদুঘরগুলোতে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ