আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় বন্ধ না হলে আগামী সেপ্টেম্বরেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য, সরাসরি এমন আল্টিমেটাম দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। খবর ইয়াহু নিউজ ও দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
২৮ জুলাই সোমবার এক জরুরি ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্টারমার এই ঘোষণা দেন। বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সম্মিলিত শান্তি পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
স্টারমার বলেন, ‘ইসরায়েল যদি গাজায় দুর্ভিক্ষ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, যুদ্ধবিরতিতে না আসে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির প্রতিশ্রুতি না দেয়, তাহলে আমরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেব। এটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচাবে।’
স্টারমারের মতে, ‘মানবিক বিপর্যয় এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববাসী শিশুদের দুর্দশা দেখছে। জাতিসংঘকে আবারও ত্রাণ পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে। ত্রাণ পাঠানো আবার শুরু করতে হবে। শিশুদের না খাওয়ার যে হৃদয়বিদারক ছবি আমরা দেখছি, তা আর চলতে পারে না।’
সরকারের অভ্যন্তরেই এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ও জ্বালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড স্বীকৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।
অন্যদিকে চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস, প্রযুক্তিমন্ত্রী পিটার কাইল ও লেবার ফ্রেন্ডস অব ইসরায়েলের (এলএফআই) ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন, এই স্বীকৃতি হামাসকে ‘পুরস্কৃত’ করার সমান হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য স্টারমারের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। স্কটল্যান্ডে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে তার কোনো আপত্তি নেই।’ ট্রাম্পের এই মন্তব্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আগের বিরোধিতাকে কার্যত দুর্বল করে দেয়।
স্টারমার জানান, তিনি ট্রাম্পকে গাজার ভয়াবহ অবস্থা ব্যাখ্যা করেছেন এবং খাদ্য সরবরাহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো যৌথভাবে গাজায় ‘খাবার কেন্দ্র’ স্থাপনে কাজ করবে, যেখানে মানুষ বাধাহীনভাবে খাদ্য সহায়তা পাবে।
স্টারমারের এই অবস্থানের পেছনে রয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের সমর্থন। তাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফ্রান্সের ঘোষণাকে ‘ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম তৈরির’ ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেন। ব্রিটেনের সম্ভাব্য স্বীকৃতি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি তেল আবিব।
এর আগে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্পেন এবং ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জি৭-এর মধ্যে ফ্রান্সই প্রথম দেশ যারা এই সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে স্টারমার ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন। সদ্য গঠিত জেরেমি করবিনের নতুন রাজনৈতিক দল এবং নয়টি দল থেকে আসা ২৫০ জনের বেশি এমপি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। এর মধ্যে ৯০ জনের বেশি নতুন লেবার এমপিও রয়েছেন।
স্টারমার বলেন, ‘গাজায় অপুষ্ট শিশুর ছবি, হাঁটতে অক্ষম শিশুদের করুণ দৃশ্য আমাদের বিবেক নাড়া দিচ্ছে। এই সংকট আমাদের চোখের সামনে ইতিহাস হয়ে উঠছে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে গাজায় আকাশপথে ত্রাণ পাঠিয়েছে, এখন স্থলপথে সহায়তার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে বলেছি, দুই-রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাস করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই সমাধান আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। স্বীকৃতি না দিলে হয়তো ভবিষ্যতে আর স্বীকৃত করার মতো কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না।’
স্টারমার বলেন, ‘এটি শুধু লেবার পার্টির নীতি নয়, এটি এখন সময়ের দাবি। প্রতিদিন গাজায় যা ঘটছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা। যুক্তরাজ্য আর চুপ করে থাকতে পারে না।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available