আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকটের মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী একদিনে আরও ৮৮ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনই ছিলেন ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, একই সময়ে ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে আরও দুই শিশুসহ অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় এখন ‘প্রকৃত দুর্ভিক্ষ’ শুরু হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। খবর আলজাজিরার।
২৮ জুলাই সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অপুষ্টিতে মারা যাওয়া লোকের সংখ্যা ১৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৮৮ জন শিশুও রয়েছে। মানবিক সাহায্য প্রবেশে ইসরায়েলের কঠোর বিধিনিষেধের কারণেই সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মার্চ মাসে ইসরায়েল এই অঞ্চলে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে, যা মে মাসে আংশিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘ ও সাহায্য সংস্থাগুলোর ব্যাপক দুর্ভিক্ষের সতর্কতা সত্ত্বেও তখন থেকে কেবল সাহায্যের একটি ছোট অংশ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ -এর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি ২৮ জুলাই সোমবার বলেছেন, গাজায় অবস্থিত তার কর্মীরা অনাহার সংকটে থাকা মানুষকে ‘জীবিতও নয়, মৃতও নয়– হাঁটা লাশ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের ওপর জাতিসংঘের এক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ক্ষোভ ও নিন্দার শব্দগুলো এখন আর যা ঘটছে তার জন্য যথেষ্ট নয়।
লাজ্জারিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান যুদ্ধবিরতি আরোপের জন্য, তীব্রতর অনাহার প্রত্যাহার করার জন্য ও প্রতিটি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে... একবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ইউএনআরডব্লিউএ-এর বিশাল কর্মীবাহিনীর মাধ্যমে মানবিক সহায়তার ব্যাপক বৃদ্ধি সম্ভব হতে পারে।
নেতানিয়াহু-ট্রাম্পের মতবিরোধ
এর আগে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজায় অনেক মানুষ অনাহারে আছে ও এই অঞ্চলের পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য তাকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতবিরোধে ফেলেছে। নেতানিয়াহু ২৭ জুলাই রোববার বলেছিলেন, গাজায় কোনো ক্ষুধা নেই। তিনি গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনি দল হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি পোস্টে নেতানিয়াহু গাজার পরিস্থিতিকে কঠিন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল অবরুদ্ধ উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে।
জাতিসংঘ ইসরায়েলের গাজায় আরও সাহায্য পাঠানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, কঠোর বিধিনিষেধ জীবন রক্ষাকারী সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল টম ফ্লেচার আল জাজিরাকে বলেছেন, এটি সঠিক দিকের একটি স্বাগত পদক্ষেপ, কিন্তু স্পষ্টতই আমাদের এখন পর্যন্ত যতটা করতে পেরেছি তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে সাহায্য পৌঁছাতে হবে।
ফ্লেচার বলেন, আমরা শুধু এসে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারি না। আমাদের এটাই করার অনুমতি দেওয়া উচিত, আন্তর্জাতিক আইন এটাই দাবি করে। কিন্তু আমরা এখনও সেই পর্যায়ে নেই। তিনি চলমান নিরাপত্তা ঝুঁকি, বন্ধ ক্রসিং, ভিসা প্রত্যাখ্যান ও কাস্টমস বিলম্বের কথা উল্লেখ করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available