আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নবম দিনে এসে পৌঁছেছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। শুরুর দিন থেকেই ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব এবং পারমাণবিক স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করতে নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বসে নেই ইরানও; শত্রুপক্ষের চোখে চোখ রেখে কঠিন জবাব দিয়ে যাচ্ছে দেশটির সামরিক বাহিনী। তবে, এবার রণকৌশলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে তারা।
ইরানের সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন আর আগের মতো বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে না তারা। বরং আগের তুলনায় অধিক উন্নত ও নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুত ফুরিয়ে আসছে বলে ইসরায়েল যে দাবি করেছে, তা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
২১ জুন শনিবার ওই কর্মকর্তার এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েল বলে আসছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুত এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকলেও তাদের চালানো বিমান হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকারী যন্ত্রের অন্তত ৫০ শতাংশ ধ্বংস হয়েছে। এর মাধ্যমে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
তবে, ইরানের সামরিক বাহিনী বর্তমানে আরও উন্নত প্রযুক্তির নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইরানি ওই কর্মকর্তা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) ইরানের এই দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড বলেছে, ইরান এমন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে, যেগুলো ক্লাস্টার বোমা বহনে সক্ষম।
এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড বা বোমা নির্দিষ্ট উচ্চতায় (প্রায় ৭ কিলোমিটার) পৌঁছে অন্তত ২০টি বিস্ফোরক অংশে ভাগ হয়ে যায় এবং প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
ইরানি ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছি এবং তা সহজেই মার্কিন থাড, প্যাট্রিয়ট, অ্যারো ৩, অ্যারো ২, ডেভিডস স্লিং ও আয়রন ডোমের সব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত করেছে। তবে, তিনি সেই ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তুর নাম প্রকাশ করেননি।
তিনি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা কমে যাওয়ায় খুশি না হয়ে ইসরায়েলের উচিত ইরানের নতুন শক্তির ভারসাম্যের সামনে কেবল দর্শকের ভূমিকায় থাকা।
এদিকে, গত ৮ দিনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বহরের সামনে নজিরবিহীনভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে ইসরায়েলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এত দ্রুত ইসরায়েলের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে যে, তা ভাঁজ ফেলে দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কপালে। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানে হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংঘাতে যোগ দিতে প্রকাশ্যে আকুল আর্তি জানাচ্ছে সাধারণ ইসরায়েলিরাও।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে সরাসরি হামলার হুমকি দিয়েছেন বটে, কিন্তু আরও অন্তত দুই সপ্তাহ অপেক্ষার কথাও জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে যে, আর এক সপ্তাহ এ সংঘাত অব্যাহত থাকলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়বে তা।
ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বাস্তবতায় রাজনৈতিকভাবে নেতানিয়াহুর টিকে থাকার অন্যতম কৌশল হলো—যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনা। কিন্তু ট্রাম্পের সময় নিতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর আকাঙ্ক্ষায় বড় ধাক্কা হিসেবেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের কলামিস্ট গিডিয়ন লেভি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে ‘চিরকাল’।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available