লে. কর্ণেল ডা: নাসির উদ্দিন আহমদ: উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। কারণ বিশ্বব্যাপী ১২০ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। স্ট্রোক, হৃদরোগ এবং কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার পেছনে অনেকাংশে দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। আমাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ কী: শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ মানুষের অজানা। হরমোন ঘটিত কিছু রোগ, কিডনির রোগ,স্টেরয়েড জাতীয় রোগ এর জন্য দায়ী। এছাড়াও কিছু ওষুধের কারণে ৫ থেকে ১০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। গর্ভকালীন অবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য কেউ কেউ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে পারে। তবে অনেকগুলো উপাদান উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন-বয়স, অতিরিক্ত চর্বি ও লবণ জাতীয় খাবার গ্রহণ, ধূমপান, এলকোহল সেবন, বংশগত ধারা, বিলাশ জীবন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এ রোগের প্রধান কারণ।
লক্ষণ ও ক্ষতিকর প্রভাব: সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কখনো কখনো উচ্চ রক্তচাপের কারণে মাথা ব্যথা, নাক থেকে রক্তক্ষরণ, ঝাপসা দৃষ্টি, বুক ধরফর ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে বমি, বুকে ব্যথা, অস্থিরতা, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এটি নিরবে-নিভৃতে রক্তনালি এবং হৃদপিন্ডের ক্ষতি সাধন করে থাকে। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। হার্ট ফেইলোরের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে রক্তচাপ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্তর রেটিনার ক্ষতি করে। ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে। কিডনি ফেইলরের পেছনে উচ্চ রক্তচাপ অনেকাংশে দায়ী। এজন্য এ রোগকে বলা হয় নিরব ঘাতক।
রক্তচাপ নির্ণয়: হৃদপিণ্ড যখন সংকুচিত হয় তখন রক্তনালীতে যে চাপ অনুভূত হয় সেটা হচ্ছে সিস্টোলিক রক্তচাপ। আর হৃদপিণ্ড যখন প্রসারিত হয় তখন রক্তনালীতে চাপ কমে আসে। সেটি হচ্ছে ডায়াস্টলিক রক্তচাপ।সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ যথাক্রমে ১৪০ এবং ৯০ মি মি পারদের বেশি হলে তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ। রক্তচাপ নির্ণয় করা অত্যন্ত সহজ। এটির জন্য হাসপাতাল কিংবা ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই রক্তচাপ মাপক যন্ত্রের সাহায্যে যে কেউ এটি নির্ণয় করতে পারেন। তবে অনেকেই সঠিকভাবে রক্তচাপের পরিমাপ নির্ণয় করতে পারেন না। সেজন্য অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে এটি নির্ণয়ের পদ্ধতি জেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
সাময়িক রক্তচাপ বৃদ্ধি: কখনো সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। পরিমাপ করে একবার রক্তচাপ বেশি পেলেই উচ্চ রক্তচাপ বলা যৌক্তিক হবে না। বিশেষত, অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সামনে এলে কারো কারো মানসিক উদ্বিগ্নতার কারণে রক্তচাপ সাময়িক সময়ের জন্য স্বল্পমাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। এটাকে বলা হয় হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন। এমনটি হওয়া বিচিত্র নয়। সেজন্য একবার ডাক্তারের চেম্বারে এসে রক্তচাপ বেশি পেলেই তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা শুরু করে দেয়া অনুচিত। রক্তচাপ একাধিকবার মেপে যদি এটি সার্বক্ষণিক বেশি পাওয়া যায়, তাহলে কেবলমাত্র ওষুধ শুরু করতে হবে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ কিছু নিয়মাবলি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। জীবনের ধরার মধ্যে আনতে হবে পরিবর্তন। লবণ গ্রহণ সীমিত করতে হবে। দৈনন্দিন লবণ গ্রহণের পরিমাণ দেড় গ্রামের মাঝে সীমিত রাখতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। তবে মাছের চর্বি উচ্চ রক্তচাপের জন্য উত্তম। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, বাদাম, ফলমূল ইত্যাদি স্থান বেশি দিতে হবে। নিয়মিত শরীর চর্চার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ১৫০ মিনিট জোর কদমে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।মানসিক অভিঘাত থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রার্থনা, মেডিটেশন, ইয়োগা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, বাইরে ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি করা যেতে পারে। ঘুমাতে হবে প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে সাত ঘন্টা। ধূমপান এবং অ্যালকোহল সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। এ সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ শুরু করতে হবে।
উল্লেখ্য, যেকোনো প্রকারে রক্তচাপকে অবশ্যই কাঙ্খিত সীমার মধ্যে রাখতে হবে। নয়তো বড় বিপদ ঘটতে পারে।
লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available