মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: গলা থেকে পুরো শরীর রাজ হাঁসের মতো। গলা লম্বা। স্বাভাবিক মাথা। শরীরের অনুপাতে ঠোঁট অনেকটা বড়। তবে নড়াচড়া কিছুটা কম। রঙ সাদা মেঠো হাঁস রঙের। পা লম্বাটে। ঠোঁটের কালার হালকা হলুদাভ। দেখতে দারুণ। পুরো শরীর ঠোঁট দেখে নজর না কেড়ে পারেই না। যেন নজর কাড়া সুন্দর।
বলছিলাম শামুকখোল পাখির কথা। শামুকখোল একটি পাখির নাম। এ পাখি এক প্রজাতিক। এর কোন উপ-প্রজাতি নেই। এমন বিরল প্রজাতির পাখিটি দেখা গেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকায়। গড়াঞ্চলের রানাদহ বিলে। আর এমন রাজদর্শন পাখিটিকে ক্যামেরাবন্ধী করেছেন সাংবাদিক ও শৌখিন ফটোগ্রাফার কামাল হোসেন।
তিনি টাঙ্গাইলের বিভিন্ন বন, জঙ্গল, বিল, ঝিল, নদীতে গিয়ে পাখির ছবি তোলেন। শখ থেকে নেশার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে তার নিত্য হেঁটে চলা। কয়েক মাসে ক্যামেরার ফ্রেমে তোলেছেন নানা প্রজাতির পাখির ছবি।
বিভিন্ন সূত্রে ও পাখি প্রেমীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শামুকখোল এর আরেক নাম শামুকভাঙা। এ পাখিটির (বৈজ্ঞানিক নাম: Anastomus oscitans)। সাইকোনিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত। অ্যানাস্টোমাস গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির শ্বেতকায় বৃহদাকৃতির পাখি। এশীয় অঞ্চলে শামুকখোলের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হাই তোলা মুখের পাখি।
অদ্ভূত ঠোঁটের জন্য খুব সহজে অন্যান্য পাখি থেকে একে আলাদা করা যায়। ঠোঁটের নিচের অংশের সাথে উপরের অংশের বেশ বড় ফাঁক থাকে। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস।
বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়নি। সেকারণে আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এশীয় শামুকখোল একপ্রজাতিক, অর্থাৎ এর কোনো উপ-প্রজাতি নেই। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের যোগান আর নিরাপত্তা থাকলে এরা সাধারণত কোনো এক জায়গা থেকে নড়ে না।
ঘাটাইলের ধলাপাড়ার রানাদহ বিলে সারা বছর পানি না থাকলেও বর্ষায় থৈথৈ করে। বড় আকারের বিল। বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পাকা সড়ক। বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ, মাছ, শেওলাসহ বৈচিত্র্যময় এ বিল। একটু দূরে শাল বনের নানা বৃক্ষ সাজানো। একদিকে বন। অন্য দিকে বিল। প্রাকৃতিক নিরিবিলি পরিবেশ। এমন শান্ত স্নিগ্ধ বিলে বিভিন্ন দেশি ও পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। বর্ষা কি শীত সারা বছরই এ বিলে পাখি দেখা যায়।
ঘাটাইলের কামাল হোসেন জানান, রানাদহ বিলে যখন পৌঁছলাম তখন সূর্য উঠে গেছে। ভোরের কোমল আলোয় বিলের পূর্ব পাড় ঝক ঝক করছে। বিলের ধারে তাকাতেই দেখি রাজদর্শন শামুকখোল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ছিলাম যদি উড়াল দেয়। ধীরে ধীরে ক্যামেরা সেটআপ করলাম। নিরাপদ দূর থেকে একাধারে ১৫টি স্ন্যাপ নিলাম। সাথে ছিলো ক্যামেরা বিশেষজ্ঞ রেজুন। রেজুনও কয়েকটি স্ন্যাপ নিলো। তখনও পাখি ঠায় দাঁড়িয়ে। ভালো একটি ছবি তোলার আনন্দ নিয়ে আমরা ওর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
রানাদহ বিলের পাশে মলাজানি গ্রামের কবি সাংবাদিক স্বাধীন আজম বলেন, এ বিলটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিল। এ বিলের মাছের স্বাদ বেশি। জলজ উদ্ভিদও জন্মে প্রচুর। বর্ষা ও শীতকালে প্রচুর দেশি-বিদেশি পাখি আসে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available