• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ বিকাল ০৪:৩৯:৪১ (29-Mar-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ বিকাল ০৪:৩৯:৪১ (29-Mar-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

মে দিবস: কেমন আছেন সাভারের ট্যানারি শ্রমিকরা

১ মে ২০২৩ দুপুর ০১:০৬:৪৬

মে দিবস: কেমন আছেন সাভারের ট্যানারি শ্রমিকরা

মো. ওমর ফারুক, সাভার প্রতিনিধি: ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন এটি। দিনটি একই সাথে মেহনতি মানুষের আনন্দ ও সংহতির দিন । প্রতিবছর সারা বিশ্বে দিবসটি একযোগে পালিত হয়। এই দিনটিতে সরকারি ছুটি পালিত হয়।

১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেট শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসেন। আন্দোলনরত এই শ্রমিকদের ওপর চালানো হয় গুলি, নিহত হন ১১ জন শ্রমিক। তাদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসাবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

প্রতিবছর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও মে দিবস পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভায় মুখরিত থাকে রাজপথ। এ দিনে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বাংলাদেশের খেটে খাওয়া শ্রমিকদের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত ট্যানারি শ্রমিকরা। কথা হয় তাদের সাথে বিশ্ব শ্রমিক দিবসে শ্রমিকদের অধিকার ও দাবি-দাওয়া নিয়ে।

সাভার বিসিক শিল্প নগরীর সালমা ট্যানারি লিমিটেডে কর্মরত নারী শ্রমিক পঞ্চগড়ের রুবি বেগম বলেন, তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। এখানে অনেক বছর ধরে কাজ করছেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও এই ট্যানারিতে সুযোগ সুবিধা থাকায় খারাপ নেই তিনি। বর্তমানে প্রোডাকশন ভালো হওয়ায় রপ্তানিও বেশি হচ্ছে। ট্যানারির কাজ আরও বৃদ্ধি পেলে তাদের সুবিধাও বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন ।

কথা হয় নোয়াখালীর বাসিন্দা সোহাগ (২৯) নামের কাটিং পোস্টে কর্মরত আরেকজন শ্রমিকের সাথে।

তিনি গত ১৫ বছড় ধরে তিনি কাটিং পোস্টে কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি ট্যানারিতে। জানালেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই আছেন। ট্যানারির সুযোগ সুবিধা নিয়ে বলেন, হাজারীবাগে থাকতে তাদের অনেক অসুবিধা ছিল কিন্তু সাভার বিসিক শিল্প নগরীতে আসার পর সবকিছুই হচ্ছে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে। উপার্জনও বেড়েছে আগের থেকে তাই বর্তমানে কোনো ধরণের শ্রমিক অত্যাচারের শিকারও হতে হচ্ছে না।

এরপর কথা হয় হাইটেক ট্যানারির ম্যানেজার মো. সাগরের সাথে।

তিনি বলেন, হাজারীবাগের থেকে সাভার বিসিক শিল্প নগরীতে অনেক সুযোগ সুবিধা থাকলেও শ্রমিকদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এসময় তিনি শ্রমিকদের জন্য শিল্প নগরীর ভেতর একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের এক আদেশে পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প স্থানান্তর করা হয়। এতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা ট্যানারিশ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের অনেকেই হাজারীবাগ ছেড়ে চলে গেছেন হেমায়েতপুরে ।

যদিও নানা কারণে এখনও অনেক শ্রমিক হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুর এসে কাজ করেন। এতো বড় প্রকল্পে শ্রমিকদের আবাসন সুবিধার কথা থাকলেও এখনো কোনো আবাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আবাসন সুবিধা না পাওয়ায় শ্রমিকদের আয়ের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে যাতায়াত ও দুপুরের খাবার খরচে।

চামড়া শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় শ্রমিকদের উন্নত, স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ কর্ম পরিবেশের দাবি থাকলেও দৃশ্যত এর অগ্রগতি হচ্ছে ধীরে। ২০১৯ সালে সাভারের হেমায়েতপুর লেদার এস্টেটের ১০টি ট্যানারিতে ২২৩ জন শ্রমিকের উপর একটি গবেষণা সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় ৫২ শতাংশ শ্রমিকদের চর্মরোগ, ৩৩ শতাংশের পেশীর ব্যাধি, ২৩ শতাংশের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, ১৫ শতাংশের দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা এবং ১৫ শতাংশের শ্বাসকষ্টের সমস্যা পাওয়া গেছে।

এতে লক্ষ্য করা যায়, সমস্ত ট্যানারি ছিল অত্যন্ত দুর্গন্ধময়। ৮ টিতে ছিল অপর্যাপ্ত আলো এবং উদ্বেগজনক তাপমাত্রা, ৬ টিতে অসহনীয় শব্দ এবং ৫ টিতে বায়ুচলাচল ব্যবস্থার ঘাটতি। মাত্র ৩ টি ট্যানারিতে সচল পাওয়া গেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) মোটেও ব্যবহার করছিলেন না। এসময় ছিলনা কর্মীদের জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কোনও চিকিৎসা সুবিধা।

একই ধরণের আরেকটি গবেষণায় ১০ টি ট্যানারির ১৬৭ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এসময় তাদের পেশাগত কর্মক্ষেত্র ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কর্মীদের বিশেষ করে মেয়াদের কাজের ক্ষেত্রগুলির তথ্য (বিম হাউস, ওয়েট ফিনিশিং, ড্রাই ফিনিশিং ইত্যাদি) গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

এতে বলা হয়, শ্রমিকদের সকলেই কাজের সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন এবং ওয়েট ফিনিশিং ও ড্রাই ফিনিশিং-এ কর্মীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়া দেখা গেছে, বিম হাউসে কাজ করলে চর্মরোগের ঝুঁকি থাকে বেশি।

সম্প্রতি সাভারের হেমায়েতপুরে বিসিক চামড়া শিল্পনগরীতে সরেজমিনে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তবে সব থেকে ব্যাতিক্রম ছিলো সালমা ট্যানারি, যেখানে শ্রমিকদের নামাজের ব্যাবস্থা থেকে শুরু করে ছিলো সুরক্ষার জন্য সকল সরঞ্জাম।

কথা হয় সালমা ট্যানারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াতুল্লার সাথে।

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান ট্যানারি শিল্পে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা একটি সমন্বিত, ব্যাপক ও বিস্তৃত ধারণা, যা বর্তমানে সকল পেশাগত ক্ষেত্রেই মেনে চলার চেষ্টা করা হয়। ট্যানারি শিল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক দ্রব্যে বিষক্রিয়া, ক্যান্সারসহ বিপজ্জনক স্বাস্থ ঝুঁকি রয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় সালমা ট্যানারি সবসময় বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আমরা রাসায়নিক পদার্থের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, মজুদকরণ, কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার, রাসায়নিক ঢালার সময় সতর্কতা ইত্যাদি বিষয়ে সতকর্তার সাথে যেনো করা হয়, সে দিকে নজরদারির ব্যাবস্থা করেছি। এজন্য আলাদা অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বি এল এফ)-এর উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান খান জানান, রাসায়নিক পদার্থের ভুল বা অযৌক্তিক ব্যবহার রোগ-ব্যাধিসহ শ্রমিকদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে । আবার কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন রাসায়নিক পরিবেশে কাজের ফলে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় । কারখানার রাসায়নিক ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করে শ্রমিক-কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।

ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রাসেল মোল্লা বলেন, বিসিক শিল্প নগরীর সকল ট্যানারি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির সকল সদস্যরা ২৪ ঘন্টা তৎপর থাকে। তাদের যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে না হয় সে দিকটা আমরা বিশেষভাবে নজরদারি রাখি। যেহেতু শিল্প নগরীর ভেতরে বা আশেপাশে কোথায় হাসপাতাল নেই তাই যখনই কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হন।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি তাদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে। এছাড়া ট্যানরিগুলোতে শ্রমিকরা মালিকপক্ষ থেকে কোনো ধরণের অসদাচরণের সম্মুখীন হচ্ছে কিনা তাও নজরদারিতে রাখার হয়।

কথা হয় বিসিক শিল্প নগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাফুজুর রহমান রিজোয়ানের সাথে।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল স্বাস্থ্য ঝুঁকির হাত থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে আমরা নানা ধরণের নির্দেশনা দিয়ে থাকি। শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে পেশাগত পরিবেশ সৃষ্টি এবং তা অব্যাহত রাখতে বিশেষ নজরদারি করা হয়।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ