নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের উদ্যোগে ‘নারী কমিশনের সুপারিশমালা ও নারী সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হল রুমে বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের সদস্য নাসিমা বেগম ঝুনু'র সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভার প্রধান আলোচক বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের সহকারী সেক্রেটারী সমাজকর্মী উম্মে খালেদা জাহান বলেন, নারী-পুরুষ উভয় মিলিয়েই সভ্যতা। আল্লাহ নারী-পুরুষকে জোড়া-জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। রাসূল (সা.) এমন সমাজ গঠন করেছেন, সেই সমাজে নারীরা ছিল নিরাপদ ও সম্মানিত। অথচ জাহিলিয়াতের যুগে নারীদের নিরাপত্তা কিংবা মর্যাদা ছিল না। তাহলে রাসূল (সা.) যেই ব্যবস্থায় সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারীকে সম্মানিত করেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। আমরা কেন সেই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে নিজস্ব মতবাদে নারী সংস্কার নীতিমালায় যাচ্ছি। নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত নীতিমালায় কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। বরং পারিবারিক মূল্যবোধ নষ্ট করবে। ইসলাম নারীকে ন্যায্য অধিকার দিয়েছে অথচ নারী সংস্কার কমিশন বলছে সমান অধিকার দিতে হবে। ইসলামে পরিবারের যাবতীয় ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের। তাহলে সমান অধিকার হলে এই ভরণপোষণের অর্ধেক দায়িত্ব নারীকেও পালন করতে হবে। ইসলাম নারীকে দেনমোহর পুরুষ দেওয়ার বিধান করে নারীকে সম্মানিত করেছে। সমান অধিকার হলে নারীও পুরুষকে দেনমোহর দিতে হবে। তাহলে নারী সম্মানিত হলো কিভাবে? - তাই বলা যায়, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সম্পূর্ণ বাতিল যোগ্য এবং প্রত্যাখান করতে হবে। তিনি রাসূলের (সা.) একটি হাদিস উপস্থাপন করে বলেন, পিতা তার কন্যার অনুমতি ব্যতিত তাকে বিয়ে দেওয়ার পর ঐ কন্যা রাসূলের (সা.) কাছে অভিযোগ করলে রাসূল (সা.) বলেছেন, তুমি যদি এই বিয়ের বন্ধন রাখতে না চাও তবে বিচ্ছেদ করতে পারো। তাহলে ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দেয়নি যারা বলে তারা কি ইসলাম জানে কিংবা ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে তারপর সংস্কারকাজ করুন। এসময় তিনি, নারী সংস্কার কমিশন বাতিল করে নতুনভাবে সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নারী সংস্কার কমিশন গঠন করতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের সদস্য সাইয়্যেদা রাহাত তাসনিয়া ও ডা. জোবায়দা'র যৌথ পরিচালনা অনুষ্ঠিত সভায় কবি ও সাহিত্যিক শামীমা রহমান শান্তা বলেন, নারী সমাজের প্রত্যাশা ছিল নারী সংস্কার কমিশন সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। কিন্তু নারী সংস্কার কমিশন সেভাবে গঠন না করে নিজস্ব পছন্দের কয়েকজনকে নিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে। যা দুঃখজনক। নারী কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে স্বেচ্ছাচারী নারী সমাজ গঠন হবে। ফলে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটবে।
এশিয়ান টিভির এসিস্ট্যান্ট নিউজ এডিটর জাবালুন নূর বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ১১ জন নারী শহীদ হলেও জাগরণী সারায় নারীদের এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, নারী সংস্কার কমিশন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা লালন করে কি-না? রাজনৈতিক সচেতন না হলে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা রাস্তায় নামলো কেন?- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে সকল আন্দোলন সংগ্রামে নারীরা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। অথচ নারী সংস্কার কমিশন বলছে, নারীরা রাজনৈতিক সচেতন নয়। যৌন হয়রানি পরিবেশ মুক্ত কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। পুরুষেরা নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং পরিপূরক ও সহযোগী। তাই নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সুন্দর সমাজ গড়তে হবে।
বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের সদস্য তাসলিমা মুনীরা বলেন, নারী সংস্কার কমিশন পারিবারিক দায়িত্ব কে নারীর অগ্রগতিতে বাঁধা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। যা একজন নারীকে তার পারিবারিক দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে পরিবারে অশান্তির সৃষ্টির পথ তৈরি হবে। এতে পরিবার থেকে সমাজে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। ধর্মীয় পারিবারিক আইনে একজন মৃত ব্যক্তির সম্পদের মধ্যে ৪জন পুরুষ ও ৮জন নারী অংশ পেয়ে থাকে। এছাড়াও পুরুষের উপর পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে। অপরদিকে নারীর অর্জিত সম্পদ নারী একক মালিক। তাহলে নারী সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়িত হলে নারীরা শুধু ঠকবেই না সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে।
লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. সাজেদা হুমায়রা বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি ভেঙে পশ্চিমাদের সংস্কৃতি চালুর পায়তারা করা হয়েছে। ধর্মীয় ভারসাম্য ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা হয়েছে। ভিন্ন পারিবারিক আইন বাতিল করে তারা নিজস্ব একটা আইনি কাঠামোতে আনার চেষ্টা করছে। এটা সরাসরি ধর্মকে অস্বীকার করার সামিল। ইসলামিক পারিবারিক আইন অমান্য করার অর্থ হচ্ছে কুরআনকে অস্বীকার করা। উত্তরাধিকারী আইন কুরআনে স্পষ্ট করা আছে। নারী সংস্কার কমিশনের আলাদাভাবে কোন আইন বা বিধান তৈরি করতে হবে না। বৈবাহিক সম্পর্কে নারী সংস্কার কমিশন জোরপূর্বক ধর্ষন আজ্ঞাহিত করে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশ সমাজে অপরাধ প্রবনতা বাড়াবে, শান্তি বিনষ্ট করবে। নারীর গোপনীয়তা উন্মোচিত হয়ে যাবে। নারী-পুরুষ কে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সৃষ্টি করবে। অথচ নারী-পুরুষের পরিপূরক, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তিনি, অনতিবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিল করে নতুনভাবে সকল সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নারী সংস্কার কমিশন গঠন করার দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার তামান্না বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, নৈতিকতা বা শ্লীলতা চর্চা না করে নারী কোন কাজ করলে তা অপরাধ হিসেবে গন্য হবে না। অথচ নৈতিকতা ও শ্লীলতা ব্যতিত সমাজ আলোকিত হয় না। নারী সংস্কার কমিশন, নারীদের নারীত্ব কে অপমানিত করেছে। যিনি পরিবার ও সামাজিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে তাহলে তিনি কার জন্য রাজনীতি করবে?- তিনি তো পরিবার ও সমাজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তার তো পরিবার বা সমাজ রইলো না। নারী সংস্কার কমিশন নারীর সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব কে স্বীকৃতির সুপারিশ না করে সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব কে অমর্যাদা করা হয়েছে। শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার এই শিরোনামের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে, আমার শরীর, আমার আমানত হিসেবেই আমাকে চলতে হবে। নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নারীর অবাধ স্বাধীনতার নামে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন নষ্ট করার অপচেষ্টা। তাই ঘৃণার সাথে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখান করে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, নারী সংস্কার কমিশন নতুনভাবে সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করতে হবে। নয়তো নারী সমাজ এই কমিশনের নীতিমালার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নাসিমা বেগম ঝুনু বলেন, নারী কমিশনের সুপারিশমালা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী। ঐ সুপারিশমালা ইসলাম সহ সকল ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে। পশ্চিমরা নারীবাদীদের উপর ভর করে যখনই গণতান্ত্রিক সরকার না থাকে। তারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের সংস্কৃতি আমাদের মাঝে ঢুকিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে। কমিশনের প্রস্তাব গুলো জাতিকে চূড়ান্ত মূল্যবোধ থেকে সরিয়ে আনবে। প্রত্যেক ধর্মে নৈতিকতা ও আদর্শের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে নারী সংস্কার কমিশন পশ্চিমাদের সংস্কৃতির সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশ নারী সমাজ প্রত্যাখান করছে। মানুষের কল্যাণের জন্যই ধর্ম। তাই ধর্মীয় বিধান উপেক্ষা করে বিকল্প কোন বিধান গ্রহন করা যাবে না। কুরআন পৃথিবীর একমাত্র গ্রন্থ যা পৃথিবীর সকল মানুষের কল্যাণে রচিত হয়েছে। পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে করো সমতা স্লোগানের বিরোধীতা করে তিনি বলেন, পুরুষের সহযোগিতায় নারী সমাজ নিরাপদে এগিয়ে যাবে। সম অধিকার নয়, চাই ন্যায্য অধিকার। তিনি, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available