আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত মার্চে চীন সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক হলো বাংলাদেশ। এ ছাড়া চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের পর থেকেই আক্ষরিক অর্থে মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে ভারতের। উপায় খুঁজে বের করতে বিশাল খরচের বোঝা কাঁধে নিতেও রাজি তারা। এরই মধ্যে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর যেন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয় সেজন্য মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত চার লেনের নতুন মহাসড়ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটি, যা ২০৩০ সালে সম্পন্ন হবে।
১৭ মে শনিবার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের জাতীয় মহাসড়ক এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করপোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) এক কর্মকর্তা বলেছেন, ড. ইউনূসের ওই মন্তব্যের জেরেই নতুন মহাসড়কটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা, যেন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল না হতে হয় তাদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের প্রথম দ্রুতগতির মহাসড়ক। এটির মাধ্যমে মূলত কলকাতার সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সমুদ্রপথ খোলা হবে। তবে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমলেও মিয়ানমারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে ভারত।
কলকাতার সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে মিয়ানমারের রাখাইনের কালাদান মাল্টি মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টে অর্থায়ন করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে রাখাইনের সিত্তে নদী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। একইসঙ্গে সিত্তে বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের পালেতওয়াকে অভ্যন্তরীণ নদীপথের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। এরপর সেখান থেকে ভারতের মিজোরামের জোরিনপুইকে সড়কের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। এগুলোর সঙ্গে মিজোরামের জোরিনপুই-লংটলাই-আইজলে আরও অবকাঠামো ও সড়ক তৈরি করে পুরো অঞ্চলটিকে সংযুক্ত করা হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো যুক্ত হওয়া একমাত্র পথ হলো শিলিগুঁড়ি করিডর। যা ‘চিকেন নেক’ নামেও পরিচিত। এছাড়া মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মাধ্যমেও ভারত তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করতে পারে। তবে বাংলাদেশ যেহেতু বঙ্গোপসাগরে ভারতের চলাচল সীমিত করেছে তাই কালাদান প্রজেক্টকে ভারত ও মিয়ানমার বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যখন শিলং-শিলচরের মধ্যে মহাসড়কটি নির্মাণ শেষ হবে তখন মিয়ানমার হয়ে কলকাতা ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যকে যুক্ত করার কাজও শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, শিলং-শিলচরের এই মহাসড়ক তৈরি ভারতের জন্য মোটেও সহজ হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় সেখানে কাজ চালানোর সময় ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে।
গত ৩০ এপ্রিল ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি রুপির এ মহাসড়কটি নির্মাণের অনুমোদন দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available