এম হাফিজ: রাজধানীর খিলগাঁও আবাসিক এলাকার ৪৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিশু উদ্যানটি গত ৩১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে দখল করে নেয় আনসার ও ভিডিপি বাহিনী। এই ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী।
২৭ মে মঙ্গলবার সকালে চৌধুরীপাড়া শিশু পার্কের সামনে এলাকাবাসী, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ-অভিভাবকদের অংশগ্রহণে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
তীব্র প্রতিবাদের মুখে আনসারবাহিনী কর্তৃক প্রায় দুই বিঘা আয়তনের এই পার্কটি সশস্ত্র পাহাড়ার সাথে চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরাও করে।
এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তাদের বাধা দিয়ে নির্দয় ভাবে প্রহার করে এবং অনেককে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশী চাপের মুখে এলাকাবাসীগণ থমকে গেলেও তারা ক্ষোভে ফুঁসে ফেপে ফুটছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডে হতবাক ও বিস্মিত।
১৯৬১ সালে নগর পরিকল্পনার মাস্টার প্লানেও এই শিশু পার্কটি দেখানো আছে।১৯৮৭ সালের সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে পার্শ্ববর্তী আনসার সদর দপ্তরের মহিলা হোস্টেল তৈরির জন্য এই জমিটি চাওয়া হলে তিনি বাহিনীকে জমিটি বরাদ্দ দেন। আনসার বাহিনী জমিটি দখলে যেতে চাইলে এলাকার জনগণ লিখিতভাবে আপত্তি জানালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি স্বরে জমিনে জায়গাটি পরিদর্শন করেন এবং উপস্থিত জনগণের সামনে জায়গাটি শিশু হিসেবে ব্যবহারের ঘোষণা দেন।
১৯৯৬ সালের ২০ মে তৎকালীন বিচারপতি হাবিবুর রহমান এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই বরাদ্দ বাতিল করে সেখানে শিশু পার্ক খেলার মাঠ স্থাপনের নির্দেশ দেন। সেই সময় ওই জমির মালিকানা পূর্ত মন্ত্রণালয় তার হাতে রেখে কেবল এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে। এই পার্ক টি এলাকাবাসীর চিত্ত বিনোদন শিশুদের খেলাধুলা সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং ঈদের জামাতের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল।
হাইকোর্টের আদেশে আনসার ভিডিপি কর্তৃপক্ষকে ৯০ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করা সিটি কর্পোরেশনকে একটি আধুনিক শিশু পার্ক তৈরি করার আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাতে আনসার বাহিনী শিশু পার্কটি দখল করে রেখেছে। আনসার বাহিনী কর্তৃক চৌধুরীপাড়া শিশু পার্ক অনৈতিক ও বেআইনিভাবে দখলের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে শিশুদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেয়ার দাবিতে মঙ্গলবার সকালে শিশু পার্কের সম্মুখে শিশু কিশোর অভিভাবকের সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খিলগাঁও আবাসিক এলাকার পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান ময়না। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকা শহরে উন্মুক্ত স্থান খেলার মাঠ, পার্ক গাছপালা, জলাশয় সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। একদিকে কতিপয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তারা এই সর্বনাশী লিপ্ত আছে এতে দীর্ঘ মেয়াদে বিপন্ন হচ্ছে ও প্রকৃতি বাড়ছে শারীরিক মানসিক অসুস্থতা সংঘাত সহিংসতা। এই শিশু পার্কটি পুরো এলাকায় শিশুবৃদ্ধ নারী পুরুষের জন্য একমাত্র খোলা জায়গা। যা বেআইনিভাবে এটি বহু বছর দখল করে পুরো এলাকায় দম বন্ধ অবস্থা তৈরি করেছে। শিশুরা প্রাণবন্ত খেলাধুলা করবে বয়স্করা হাঁটবেন বসবেন কোন এলাকায় আলো বাতাস থাকবে এলাকার প্রায় ৪০ টি সামাজিক সংগঠন ক্লাব, মসজিদের সদস্য ও কর্মকর্তাবৃন্দ বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ সর্বস্তরের জনসাধারণ শিশু কিশোর ও অভিভাবকেরা উপস্থিত হয়ে জানাই এবং অবিলম্বে শিশু প্রার্থী দখল মুক্ত করে এলাকার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলির কাছে আবেদন জানায়।
রাজধানীর খিলগাঁও আবাসিক এলাকার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী শিশু পার্কটি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর দখলে থাকায় এলাকাবাসী চরম হতাশা ও ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আনসার বাহিনী প্রায় দুই বিঘা আয়তনের এই পার্কটি সশস্ত্র পাহারার মাধ্যমে ঘেরাও করে দখলে নেয়।
এরপর থেকে পার্কটি সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য আর উন্মুক্ত হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিশুদের খেলার একমাত্র খোলা জায়গা হিসেবে পরিচিত এই পার্কটি ১৯৬১ সালের নগর পরিকল্পনায়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরশাদ সরকার আমলে আনসার বাহিনী নারী হোস্টেল নির্মাণের উদ্দেশ্যে পার্কটির জমি দাবি করলে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সরেজমিন পরিদর্শন করে জায়গাটি শিশু পার্ক হিসেবে সংরক্ষণের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনসার বাহিনীর বরাদ্দ বাতিল করে সেখানে পার্ক স্থাপনের নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, হাইকোর্টও ৯০ দিনের মধ্যে আনসার বাহিনীকে জমি হস্তান্তরের আদেশ দেন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিক শিশু পার্ক নির্মাণের নির্দেশনা দেন। তবে এতদিনেও সেই আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available