রাঙামাটি প্রতিনিধি: পর্যটন নগরী রাঙামাটিতে এক নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ২৭ জুলাই রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার সময় রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের আবাসিক হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে উক্ত নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। এসময় নারীর পরনে জিন্সের প্যান্ট ও শরীরে শার্ট পরা অবস্থায় খাটে অর্ধশোয়া ছিলো।
হোটেলটি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বরদের তিন ভাইয়ের মালিকানাধীন হলেও সেটি কন্ট্রাকে নিয়ে পরিচালনা করেন জনৈক কুতুব উদ্দিন।
এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে হোটেলটির ম্যানেজার কাম পরিচালক কুতুব উদ্দিনকে আটক করে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাহেদ উদ্দিন।
আটক ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন জানিয়েছেন, গত ২৬ জুলাই ওই নারী রাঙামাটিতে এসে তার হোটেলে উঠেন। কি কারণে তিনি রাঙামাটিতে এসেছেন সেই বিষয়ে রেজিষ্ট্রারে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছুর উল্লেখ ছিলো না।
ম্যানেজার জানান, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে উক্ত নারীকে হোটেলটির ৫ নম্বর রুমের ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে খাটের উপর রাখেন। পরবর্তীতে তিনি হোটেলটির মালিকপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং রাত দেড়টার পরে কোতয়ালী থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান। ঘটনার পরপরই কেন পুলিশকে জানাননি; প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর কেন জানালেন? এমন প্রশ্নের কোনো সুদুত্তর দিতে পারেননি ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন।
এদিকে, হোটেলটি রেজিষ্ট্রার বইয়ে উক্ত নারীর নাম মিসেস মুন্না সরকার এবং ঠিকানা ঢাকার ধানমন্ডি উল্লেখ থাকলেও মৃত্যুর খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটিতে আসা উক্ত নারীর স্বামী পরিচয়দানকারী আব্দুল কাদের ও কন্যা সাদিয়া আক্তার বৃষ্টি ও মা মমতাজ বেগম সকলেই উক্ত নারীকে তাদের স্বজন এবং তার প্রকৃত নাম মুন্নী আক্তার এবং তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন।
মুন্নী আক্তারের পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি কী কাজ করতেন সেটি তারা জানতেন না। তবে এরআগেও তিনি রাঙামাটিতে অন্তত তিনবার এসেছিলেন এবং এই গোল্ডেন হিলেই উঠতেন। কুতুব উদ্দিনের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিলো এটা তারা সকলেই জানতেন।
এদিকে, মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গিয়ে হোটেল গোল্ডেন হিলে তল্লাশি চালিয়ে ১২ নম্বর রুম থেকে পতিতাসহ এক খদ্দেরকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ওই খদ্দের পুলিশকে জানান, হোটেলটির ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন তিন হাজার টাকার বিনিময়ে পতিতা সরবরাহ করেছেন। কুতুব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ‘আমাকে পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডের জনৈক বোটওয়ালা পতিতা সাপ্লাই দেয়।’
এদিকে, আবাসিক হোটেলে আগন্তুক ব্যক্তি রুম ভাড়া নেওয়ার সময় তার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্যানুসারে রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করার নিয়ম থাকলেও মুন্নি আক্তারের বেলায় সেটি অনুসরণ করা হয়নি এবং প্রতিদিন থানা পুলিশের কাছে রেজিষ্ট্রার খাতা প্রদর্শনপূর্বক সিল মেরে নিয়ে আসার কথা থাকলেও উক্ত হোটেলের রেজিষ্ট্রার প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়ে যাওয়া হয় এবং এটি আবাসিক হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ করে বলে জানিয়েছেন আটক ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন।
এদিকে, পুলিশ সূত্র, স্থানীয় এলাকাবাসী ও দোকানদাররা জানিয়েছেন, উক্ত গোল্ডেন হিল আবাসিক হোটেলটিতে দীর্ঘদিন ধরেই পতিতা ব্যবসা করে আসছিলো কুতুব উদ্দিন। মার্কেটের ভিতর সিসি ক্যামেরা বেষ্টিত হওয়ায় প্রশাসনের লোকজন উক্ত হোটেলে অভিযানে গেলে আগে থেকেই ক্যামেরায় দেখে পতিতাদেরকে নিচ দিয়ে সরিয়ে দিতেন কুতুব উদ্দিন। সর্বশেষ রহস্যময় নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে গিয়ে উক্ত হোটেল থেকে পতিতাসহ খদ্দের আটকের ঘটনায় স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পেলো পুলিশ।
কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাহেদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের পাশাপাশি মরদেহের ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available