গাজীপুরের (শ্রীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে ৪৩ বছরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ইউপি সদস্য মো. ইয়ার মাহমুদ। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। তবুও হাল ছাড়েনি। অদম্য চেষ্টায় অবশেষে ৪৩ বছরে স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি। তার এই সফলতায় খুশি স্ত্রী সন্তান ও স্বজনরাও।
ইউপি সদস্য মো. ইয়ার মাহমুদ (৪৩) উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য।
ইউপি সদস্যের কন্যা স্কুলশিক্ষক আরিফা খাতুন বলেন, দরিদ্র কৃষক বাবার ঘরে আমার বাবার জন্ম। বাবা স্কুল জীবনে খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে অষ্টম শ্রেণিতেই বাবার পড়াশোনা বন্ধ হয়। তখন থেকেই অসুস্থ বাবার সংসারের হাল ধরতে হয়েছে বাবাকে। যার কারণে আর্থিক সংকটে পড়াশোনা বন্ধ হয়। কিন্তু বাবা হাল ছাড়েনি। ২০২৩ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০২৫ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যেখানে ফলাফল এসেছে এ গ্রেড। বাবার এই বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করায় আমরা খুবই আনন্দিত। অনেক খুশি পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা।
ইউপি সদস্য মো. ইয়ার মাহমুদ বলেন, কী বলবো এটা আমার স্বপ্ন ছিলো। আজ পূরণ হলো। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবো। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা ছাড়তে হয়। কৃষক বাবা অসুস্থ হলে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তখন থেকেই সংসারের খাটুনি অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসা, এসব নিয়ে বহুবছর কেটেছে। তবুও পড়াশোনা করার আগ্রহ থেকে যায়। নিজের একমাত্র মেয়েকে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছি। বর্তমানে সে একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। মেয়ের কথা ভেবে আমিও মনস্থির করি, স্কুলে ভর্তি হব। ২০২৩ সালে ভর্তি হই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। ক্লাসে গেলে অনেকেই হাসাহাসি করতো। তবুও পিছু হাঁটিনি। পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে মনটা ভরে গেছে। এই ফলাফলের জন্য আমার স্ত্রী-সন্তান, প্রতিবেশী এবং শিক্ষকদের অবদান আছে।
শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, এই বার্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সকল বয়সীদের পড়াশোনা দরকার। ইয়ার মাহমুদ সমাজের জন্য একটি বার্তা। শিক্ষার আসলে কোনো বয়স নেই। তার জীবনের কল্যাণ কামনা করি।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার এই বয়সে এসে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছেন, এটি খুবই আনন্দের। সকল মেম্বারদের জন্য এটি একটি সুন্দর মেসেজ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available