বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শহীদ শামসুল হক হলের ডাইনিংয়ে ফিরেছে শৃঙ্খলা ও স্বস্তি। গত বছরের ৫ আগস্টের পরে হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ডাইনিং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাবলীগ জামাত সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের হাতে। এরপর থেকেই পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় পাল্টে গেছে ডাইনিংয়ের চিত্র। নিয়মিত খাবারের মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও স্বল্পমূল্যের বিশেষ আয়োজন, সব মিলিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে এই উদ্যোগ।
বর্তমানে ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্বে আছেন কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ। তাদের সঙ্গে সময়ভেদে আরও দুই-তিনজন শিক্ষার্থী দায়িত্ব ভাগাভাগি করে কাজ করেন।
হল সূত্রে জানা যায়, ডাইনিংয়ে মিলের পদ্ধতি ‘বর্ডার সিস্টেম’-নির্ভর। অর্থাৎ, অগ্রিম টাকা দিয়ে মিল চালু করতে হয়। দুই বেলা মিলিয়ে প্রতিদিনের খাবারের খরচ মাত্র ১০০ টাকা। কেউ চাইলে শুধু এক বেলাও খেতে পারেন, সেটির জন্য ৫০ টাকা ধার্য। প্রতিদিনের খাবারে থাকে ভাত ও ডাল (আনলিমিটেড), দুপুর ও রাতে বিকল্পভাবে মাছ বা মুরগি, সঙ্গে একটি ভর্তা বা ভাজি। সপ্তাহে একদিন ডিম ভাজির সঙ্গে থাকে দুই ধরনের ভাজি বা ভর্তা ও মাছ ভর্তা। প্রতি দুই সপ্তাহে একদিন বিশেষ খাবার হিসেবে দেওয়া হয় খিচুড়ি বা বিরিয়ানি, তাও ৫০ টাকায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, ডাইনিংয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন হলো মাসিক গ্র্যান্ড ডিনার। প্রতি মাসের ৩০ তারিখে এটি আয়োজন করা হয়। এ মাসের গ্র্যান্ড ডিনারটি অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মে বৃহস্পতিবার, ঈদের ছুটির ঠিক আগে। মাত্র ১০০ টাকায় দেওয়া হয় একটি পূর্ণাঙ্গ ও ব্যতিক্রমধর্মী মেনু, যাতে ছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট, মাছ ভুনা, বুটের ডাল (গিলা-কলিজা মিক্সড), মিক্সড সবজি, কোল্ড ড্রিংকস, দই, মিষ্টি, মিষ্টি পান। গ্র্যান্ড ডিনারের অতিরিক্ত খরচ মেটানো হয় পুরো মাসের ডাইনিং খরচ থেকে সঞ্চিত টাকায়। প্রতিদিনের মিল থেকে গড়ে ৫-৬ টাকা বাঁচিয়ে এই বিশেষ আয়োজনের খরচ মেটানো হয়। এছাড়াও যারা পুরো মাস নিয়মিত ডাইনিংয়ের খাবার গ্রহণ করেন, তাদের জন্য থাকে বিশেষ উপহার, চাবির রিং, টুথপেস্ট বা কফির প্যাকেট।
তারা আরও জানান, প্রতিসপ্তাহের শুক্রবার ডাইনিংয়ে থাকে বিশেষ আয়োজন। কখনো ১০০ টাকায় মুরগির রোস্ট, পোলাও, বুটের ডাল ও সবজি, আবার কখনো ৮০ টাকায় পরিবেশন করা হয় বিরিয়ানি।
এ বিষয়ে ডাইনিং ম্যানেজার মো. সাজ্জাদ বলেন, হল প্রশাসন থেকে যদি নিয়মিতভাবে ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকত, তাহলে শিক্ষার্থীদের আরও উন্নতমানের খাবার সরবরাহ সম্ভব হতো। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ফার্মের দুধ ডাইনিংয়ে সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা যেত। ডাইনিংয়ের বয়দের বেতন ও বোনাসও সময়মতো পরিশোধের প্রয়োজন রয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে শহীদ শামসুল হক হলে প্রতিদিন গড়ে দুই বেলা মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত ডাইনিংয়ের খাবার গ্রহণ করছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ডাইনিং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি মডেল হয়ে উঠেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available