শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে থামছে না দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। কতিপয় চিকিৎসকের স্বেচ্ছাচারিতা, অফিসের সময় হাসপাতালে উপস্থিত না থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখা ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে আড্ডা, যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সর্বোপরি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহবায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, ‘আমরা অনেকবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এসেছি এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত যেই সেবা সেটি যেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে, সেজন্য আমরা বার বার তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, রুটিন অনুযায়ী ডাক্তার যারা ডিউটিতে থাকার কথা, তাদের রুম তালা দেওয়া।’
ইমরান আল নাজির আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, হাসপাতালের ডাক্তাররা গড়ে তুলেছেন ক্লিনিক। কেউ কেউ আবার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে বাইরের ক্লিনিকে চেম্বার করছেন। হাসপাতালে নিয়মের কোন বালাই নাই। এ বিষয়গুলো হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আমরা বার বার জানিয়েছি, কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারলে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের অপসারণের দাবি তুলবেন বলেও জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইমরান আল নাজির।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। শুধু শরীয়তপুর সদর নয়, আশপাশের উপজেলা ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, গোসাইরহাট, নড়িয়া ও জাজিরা থেকেও রোগীরা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা কেবল চিকিৎসক দেখানো ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।
হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনে রোগীর এক্স-রেসহ নামমাত্র কিছু রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তবে নেই সিটিস্ক্যান, এমআরআই, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। ডিজিটাল এক্সরে মেশিন থাকার পরও অধিকাংশ সময় ফিল্ম না থাকার অজুহাতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুই-তিন গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। জরুরি রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সাধারণ মানুষ তার সুবিধা পায় না।
এছাড়া শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের রমরমা বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। খোদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন ডাক্তারের সমন্বয়ে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিম্পল ইনজুরিকে মারাত্বক জখম, আবার জখম মারাত্বক হলেও তাকে দেয়া হচ্ছে সিম্পল সার্টিফিকেট। এতে আদালতে মারামারি মামলার বিচারপ্রার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ডাক্তার আকরাম এলাহী অর্থোপেডিক ডাক্তার হওয়ায় যেকোন মারামারির রোগীর ক্ষেত্রে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিতে হলে তার স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। কিন্তু ডাক্তার আকরাম এলাহী প্রতিটি সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করতে প্রকাশ্যেই ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। এছাড়া ডা. আকরাম এলাহীর বিরুদ্ধে রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই প্রাইভেট ক্লিনিকে চলে যান তিনি।
এসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি এক রোগীকে চেম্বারে বসেই পিটিয়েছেন ডা. আকরাম এলাহী, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালসহ একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
এসব বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আপনারা এসে দেখে যান।
তিনি আরও জানান, সপ্তাহে ৩ দিন সকালে আধাঘণ্টা করে ওষুধ কোম্পানির লোকদের ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাতের সময় দিয়েছি। অন্যজনের কথা বিশ্বাস করেন কেন? সব সময় অফিসে থাকা যায় না। বাইরে আমাদের অনেক কাজ আছে। টাকার বিনিময়ে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ নেই।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available