মো. হানিফ মেহমুদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ লাখ ৬৯১টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় খামারে প্রস্তুত করা এসব পশু চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ১ লাখ উদ্বৃত্ত থাকবে। উদ্বৃত্ত পশু যাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, খুলনা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
খাবারের মূল্য ও লালনপালন খরচ বেশি হওয়ায় দাম আগের চেয়ে চড়া থাকার সম্ভবনা রয়েছে। তবে প্রাণী সম্পদ বিভাগ, খামারি, বেপারি, গৃহস্থ ও কোরবানিদাতারা আশা করছেন, বাজেটের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত পশু মিলবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ ঘনিয়ে আসায় পশুর বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন তারা। খামারের পাশাপাশি এসব পশু বেচা-কেনা হচ্ছে স্থানীয় হাট-বাজারেও। তবে আর সপ্তাহ খানেক পর কোরবানির পশুর জমজমাট বেচাকেনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা ও হাট ইজারাদাররা।
জানা গেছে, এবার লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারিরা। খামারে ও হাটে বাজারে বর্তমানে দাম পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর আশাও করছেন তারা। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির মাঝেও এবার জেলায় বেড়েছে খামারি ও গরু লালন-পালনের সংখ্যাও। তবে শঙ্কা আছে দেশের বাজারে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ নিয়ে। যদিও খামারিদের পাশে থাকার আশ্বাস প্রাণী সম্পদ বিভাগের।
এবার কোরবানিকে ঘিরে জেলাজুড়ে প্রায় বাড়িতে একটি, দুটি করে দেশি গরু, খাসি, মহিষ, গাড়ল ও ভেড়া লালনপালন করেছেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে ছোট ও বড় বাণিজ্যিক খামারগুলোতে শাহীওয়াল, সিন্ধি, দেশী ষাঁড়সহ নানা জাতের গরু কোরবানিতে বিক্রির জন্য হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে।
খামারিরা বলছেন, কোনো ধরনের ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ভিটামিন ওষুধ ছাড়াই শুধু ঘাস, ভুট্ট্রা, ফিড এবং দানাদার খাবার খাইয়ে পশুগুলোকে লালনপালন করা হচ্ছে। কোরবানির জন্য পশুগুলোকে প্রস্তুত করতে যত্নের কোনো কমতি রাখা হচ্ছেনা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে এবার বিগত বছরগুলোর তুলনায় জেলায় খামারির সংখ্যা যেমন বেড়েছে; তেমনি গরু লালন-পালনের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে গত কয়েক বছর ধরে এই খাতে যে অনেকটা টানাপোড়নের সৃষ্টি হয়েছিলো; সেখান থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। শেষ পর্যন্ত ন্যায্যমূল্য পেলে, এই খাতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছিল, খামারি ও গরু লালন-পালনের সংখ্যা কমে আসছিল; তা দূর হতে পারে’।
তবে খামারিদের দাবি, তারা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং বাজারটা যখন মোটামুটি ভালো যাচ্ছে, তখন লাভের আশার মাঝেও; শঙ্কা কাটছেনা খামারিদের। বলছেন কোরবানির হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর আমদানি হলে, লোকসানে পড়বেন তারা। এজন্য চোরাই পথে ভারতীয় গরু যাতে কোনোভাবেই দেশের বাজারে আমদানি না হয় তার দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে জেলার খামারিদের আবার ঘুরে দাঁড়ানোটা বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে; নিবন্ধিত ১৩হাজর ৫২২টি বাণিজ্যিক খামারে গরু লালনপালন করা হয়েছে ২ লাখ ৬৯১টি। এছাড়া প্রান্তিক ও গ্রামগঞ্জে প্রায় বাড়িতে আরও দুটি, একটি করে আরও প্রায় লক্ষাধিক গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় এবার নতুন করে খামারের সংখ্যা বেড়েছে ৫২২টি এবং গতবারের তুলনায় প্রায় ১৯ হাজার গরুও অতিরিক্ত লালনপালন করা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা। প্রাকৃতিক উপায়ে গরু লালনপালন করতে পারেন সে বিষয়ে আমরা খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ বছরও দেশী জাতের গরু কোরবানি বেশি হবে। জেলায় স্থানীয়ভাবে যে ১৭টি গরুর হাট রয়েছে সেখানে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম থাকবে।’ হাটে ব্যবসায়ী ও খামারিরা নির্বিঘ্নে পশু বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available