ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর ওপর হামলার ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফর আলীকে।
৩১ মে শনিবার বিকালে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার এ আদেশ দিয়েছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. শামসুল আজম।
তিনি বলেন, জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলীকে থানা থেকে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৩০ মে) বিকেল নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামে বৈশাখী ইসলাম বর্ষা নামে এক বৈষম্যবিরোধী নেত্রীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। সে ওই গ্রামের সাবু শেখের মেয়ে এবং জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। এ ঘটনার তৎপরবর্তী ঘটনার প্রেক্ষাপটে তাকে নগরকান্দা থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বৈশাখী জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ বৈশাখীর ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল স্থানীয় জালাল বেপারীর ছেলে শরিফ বেপারী। ওই বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এসময় উক্ত্যক্তকারী যুবককে পুলিশ আটক করলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। তখন পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে স্থানীয় সেকেন কাজী ও তার ছেলে সাগরকাজীসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা বৈশাখী ও তার ছোট বোনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন বৈশাখী।
বৈশাখী অভিযোগ করেন, সাগর কাজী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এখনো তাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাকে মারবে, আমার বাড়িঘর ভাঙ্গবে। আমিসহ আমার পরিবারের সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
হামলার ঘটনার পরে বৈশাখী ফেসবুক লাইভে এসে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলে ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতারা ঘটনাস্থল বৈশাখীর বাড়িতে যান। এসময় ছাত্রনেতাদের উপর চড়াও হয় স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী। তারা বৈশাখীর বাড়িতেও হামলা চালায়। এর প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করে সেখানে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত সেকেন কাজী ও সাগর কাজীর কোনো পদ পদবী না থাকলেও বিএনপির উপজেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন বানিয়ে এলাকায় টাঙিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং ৫ তারিখের পর থেকে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহ্বায়ক কাজী রিয়াজুল ইসলাম জানান, ছোট বোনের উত্যক্তের বিচার চাওয়াতে আমাদের বোন বৈশাখীকে মারধর করা হয়েছে, চুল ধরে রাস্তায় ফেলে মেরেছে ওকে। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা ওদের বাড়িতে আসলে আমাদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে বখাটেরা। আমাদের বোনের উপর হামলার বিচার চাই আমরা।
এদিকে বিএনপির সাথে এই ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত শরীফ। তিনি বলেন, বিএনপিকে দায়ী করার জন্য মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বিএনপির কেউ এঘটনার সাথে জড়িত নয়। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এসব ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বরত) আসিফ ইকবাল।
তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও ঘরবাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় দুটি মামলায় বাদী হয়েছেন বৈশাখী ইসলাম বর্ষা। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানা পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available