• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৭:৫৮:২৬ (01-May-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৭:৫৮:২৬ (01-May-2025)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

মধুমতি সংস্থার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

১ মে ২০২৫ বিকাল ০৩:৩১:৪৩

মধুমতি সংস্থার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

হানিফ মেহমুদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ: প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কেউই তাদের জামানতের টাকা ফেরতের দাবিতে নতুন করে আর কোনো মামলা করতে পারবেন না। এমনকি টাকা আত্মসাৎকারী ভুয়া এনজিওর কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে করা যাবে না অভিযোগ। এমন শর্ত দিয়ে নিজেদের জামানতের টাকা ফেরতের দাবিতে করা মামলার বাদীদের কাছে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাৎকারী মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক মাস ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় জামানত রেখে টাকা ফেরতের দাবিতে মামলার বাদীদের স্ট্যাম্পে সাক্ষর নিতে জেলা শহরের আরামবাগস্থ মধুমতি গ্রাহক সেবা অফিসে ডাকছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এরপর জামানতের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন মামলার বাদীদের। কেউ সাক্ষর করতে না চাইলে রাজনৈতিক দলের নেতাদের দিয়ে দেখানো হচ্ছে ভয়ভীতি-হুমকি। টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো মামলা তুলে নিতে বাদীদের বিরুদ্ধে এমন নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ৪৬টি শাখায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর অবৈধ অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক হয় মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা। এরপর একে একে টাকা ফেরতের দাবিতে মামলা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। পরে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মালিক মাসুদ রানা এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা মাসুদ রানার পরিবারের ১৮ জন সদস্য কারাগারে থাকলেও টাকা ফেরত পায়নি গ্রাহকরা।

অভিযোগ উঠেছে, সরকার পতনের পর মাসুদ রানা ও তার পরিবার আত্মসাৎকৃত ১০৫ কোটি ফেরত না দিতে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ রেখে টালবাহানা শুরু করে। এমনকি যে কোনো মূল্যে প্রায় ৪০০টি মামলায় জামিন নিয়ে বাইরে আসার পরিকল্পনা করছে তারা। এরই অংশ হিসেবে গ্রাহক সেবা অফিসে ডেকে স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এমনকি মাসুদ কারাগারে থাকা অবস্থায় ঋণ গ্রাহকদের উত্তোলনকৃত সোয়া দুই কোটি টাকা বিতরণ না করে সে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।  

গ্রাহক ও মামলার বাদীদের অভিযোগ, ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা (প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা) জানান, টাকা ফেরত দেয়া হবে তাই এই প্রক্রিয়া। কিন্তু গ্রাহকরা সাক্ষর করার আগে এক কপি নিজেরা নেয়ার দাবি ও শর্তগুলো দেখতে চাইলে তা না দেখিয়ে সাক্ষর করিয়ে নিতে চান মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা। কোন বাদি তাতে অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের দিয়ে দেয়া হয় হুমকি ও ভয়ভীতি।

জানা যায়, ২০২২ সালে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা টাকা আত্মসাতের পর তা ফেরতের দাবিতে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার বিরুদ্ধে বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে ৪ শতাধিক মামলা করেছেন গ্রাহকরা। এসব মামলায় বাদী গ্রাহকদের মোট আর্থিক দাবি প্রায় ৩২ কোটি টাকা। তবে ৪০০ গ্রাহক মামলা করলেও মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সর্বমোট গ্রাহক প্রায় ৩৫ হাজার। তাদের পাওনা প্রায় ১০৫ কোটি টাকা। গ্রাহকদের এসব মামলায় মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী,মাসহ তার পরিবারের ১২-১৩ জন সদস্য ও কর্মকর্তারা কারাগারে রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আপাতত ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর নিয়ে পরে আমরা কিছু শর্ত লিখে দিব। এরমধ্যে থাকবে, নতুন করে আর মামলা করা যাবে না, কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে না, আসামিদের জামিনে কোন আপত্তি নেই, এছাড়াও ৯ সদস্যদের কমিটি গত এক বছরে যে টাকা উত্তোলন করেছেন তা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবে তা মানতে আপত্তি থাকবে না এমন কিছু। এদিকে, এসব শর্তের বিষয়টি এ প্রতিবেদক কে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কাছে জামানতের ২ লাখ টাকা পাবেন শিবগঞ্জের সেরাজুল ইসলাম। এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। তাকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর দেয়ার জন্য গত কয়েকদিন আগে অফিসে ডাকা হয়েছিল। এ নিয়ে তিনি বলেন, অফিসে যাওয়ার পর আমাকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর করতে বলেন সেখানকার কর্মকর্তারা। আমি স্ট্যাম্পে কি লেখা থাকবে তা জানতে চাইলে তা তারা দেখাতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই সাক্ষর না করেই চলে এসেছি।

মামলার বাদি ও গ্রাহক মাউন রেজা মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কাছে পাবেন ৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এই টাকা ফেরতের দাবিতে মামলা করেছেন তিনি। মাউন রেজা জানান, স্ট্যাম্পে কি লেখা হবে তা বলতে চাই না তারা। এমনকি স্ট্যাম্পে সাক্ষর নিলেও আমাদেরকে এক কপি দিতেও চাই না। তাই সেখানে সাক্ষর করিনি।

গ্রাহক ও মামলার বাদি মনিরুল ইসলাম (ছদ্মনাম) জানান, আমাকে অফিসে ডেকে জোরপূর্বক সাক্ষর করতে বলে। আমি অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় এক জামায়াত ও বিএনপির দুই নেতাকে দিয়ে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়, সাক্ষর না করলে টাকা ফেরত দেয়া হবে না। আমার মতো যারাই সাক্ষর করছে না, তাদেরকেই এভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সাক্ষর করার পর সেখানে কি লিখা হবে তাও বলছে না। টাকা ফেরত দিতে চাইলে তো এমনিতেই দেয়া যায়। শুনেছি ইতোমধ্যে তারা ঋণের প্রায় ৪ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু গ্রাহকদের জামানত ফেরত দিচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না শর্তে এক গ্রাহক জানান, ৪০০ মামলার বাদীদের কাছে এভাবে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয়ার পর তা জেলা প্রশাসন ও আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। এর ভিত্তিতে আসামিদের জামিন করিয়ে গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাতের চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র শুরু করেছে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা। অথচ প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা মালিক মাসুদ রানার কারণে এখন পথে বসেছে। সবগুলো অফিস বন্ধ করে টাকা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। নিজেদের শেষ সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৩৫ হাজার গ্রাহক।

এদিকে শহরের অস্থায়ী কার্যালটিরও সাইনবোর্ড সরিয়ে নিয়েছে কর্মকর্তারা। ধারণা করা হচ্ছে নতুন করে প্রতারণা করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।  

এ নিয়ে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. ইসলাম বলেন, আমরা মামলার বাদীদের দিয়ে স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নিচ্ছি তা সঠিক। তবে তা তাদের পাওনা টাকার কিছু অংশ ফেরত দেয়ার জন্য। ফাঁকা স্ট্যাম্পে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্ষর করিয়ে নেয়ার পূর্বে সকল শর্তাবলি গ্রাহকদের পড়ে ও দেখতে সুযোগ দেয়া হয়। তবে শর্তগুলো দেখতে চাইলে তা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এমনকি শর্ত দেখে সাক্ষর করেছেন এমন গ্রাহকের সাথে কথা বলতে চাইলেও তা করতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. গোলাম মোর্শেদ বলেন, ৩৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে টাকা ফেরতের দাবিতে মাত্র তিন শতাধিক গ্রাহক আদালতে মামলা করেছে। তবে সমাধানের স্বার্থে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা ও মামলার বাদি যদি চাই সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতিতে টাকা ফেরতের ভিক্তিতে আসামিদের জামিন হতে পারে। অবশ্য তাতে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে। কিন্তু জোরপূর্বক ফাঁকা স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে জামিন আবেদন করার বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনকি বাদীকে এভাবে বাধ্য করে সমাধান করার সুযোগ নেই।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ


প্রবাসীদের পক্ষে দাঁড়ালেন হাসনাত
১ মে ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৩:২১

সোমবার দেশে ফিরতে পারেন বেগম জিয়া
১ মে ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:০৬:৪৭