• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৬:৩৬:০০ (30-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৬:৩৬:০০ (30-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

জাতীয়

শুধুমাত্র অবকাঠামো উন্নয়ন করে জলাবদ্ধতার নিরসন করা যাবে না

২০ আগস্ট ২০২৩ সকাল ০৮:৩২:০১

শুধুমাত্র অবকাঠামো উন্নয়ন করে জলাবদ্ধতার নিরসন করা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: নগর এলাকার প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে কৃত্রিম ড্রেনেজ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল করে ফেলার কারণে বাংলাদেশের মহানগর, জেলা ও পৌর এলাকার নগরসমূহে জলাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শুধু প্রকৌশল সমাধান খোঁজা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করেই বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। নগরজুড়ে তৈরি করা হচ্ছে অবকাঠামো। কিন্তু নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অবকাঠামো উন্নয়ন করে কার্যকর ও টেকসই সমাধান আসবে না।  

কৃত্রিম ড্রেনেজ ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের প্রকল্পে আর্থিক সংশ্লেষ ও অর্থনৈতিক লাভের সুযোগ থাকাতে এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্পের প্রতি বিভিন্ন নগর সংস্থার অতি আগ্রহ লক্ষ করা যায়। প্রাকৃতিক জলাধারগুলো নগরায়নের চাপে এবং নগর সংস্থাসমূহের উদাসীনতায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে শহরের বৃষ্টির পানি ধারণ ক্ষমতা  হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য ড্রেনেজ পরিকল্পনার অবকাঠামোগত ও প্রকৌশলগত সমাধানের পাশাপাশি পরিকল্পনাগত ও ব্যবস্থাপনাগত সমাধানের কার্যকর ও টেকসই সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন শহরের জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় কথাগুলো বলেন বক্তারা। ১৯ আগস্ট শনিবার সকাল ১১টায় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গবেষণা এবং নীতি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এ সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘নগরে-নগরে জলাবদ্ধতা: সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, কক্সবাজার সহ বিভিন্ন শহরের জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গ’।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আইপিডির উপদেষ্টা আকতার মাহমুদ বলেন, এই বছর চট্টগ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা হয়েছে। ২০ বছর ধরে এই নগরীতে জলাবদ্ধতার তীব্রতা বাড়ছেই। ২০-২৫ বছর ধরে ওয়াসা, সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘অমার্জনীয় নির্লিপ্ততার’ কারণেই চট্টগ্রামের এমন পরিস্থিতি হয়েছে। প্রতিবছর ১০-১২ বার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ বছর বান্দরবানে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও বন্যা হয়েছে। সিলেট, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকায় সব নগরীতেই জলাবদ্ধতা বাড়ছে।

আকতার মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, জোয়ার-ভাটার প্রভাবের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন হয়েছে। এটাও বিভিন্ন নগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৌশল সমাধান খোঁজা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিবেশগত সমাধান খুঁজতে হবে। ভূমি সংবেদনশীল এবং জলবায়ু সংবেদনশীল পরিকল্পনা প্রণয়ন করে জলাবদ্ধতা নিরসনের উপায় বের করতে হবে। নগরীতে পানি ধারণের জায়গা (জলাধার) সংরক্ষণ করতে হবে, বৃষ্টির পানি যেন বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হতে পারে, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। প্রকৃতিকে ‘শ্রদ্ধা’ করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম, বরিশাল, সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন শহর এলাকায় জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ প্রকল্পসহ বিভিন্ন অবকাঠামো-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করা হলেও তেমন একটা সুফল নেই; বরং অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে। জলাবদ্ধতার প্রকৌশলগত সমাধানের পাশাপাশি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাগত সমন্বিত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে গুরুত্ব কম দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্য সমন্বয়হীনতার অভাবও রয়েছে।

বিভিন্ন নগর এলাকার জলাবদ্ধতার কারণ সম্পর্কে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগর এলাকার প্রাকৃতিক পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ধ্বংস করে কৃত্রিম ড্রেনেজ-ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হলেও এ ধরনের প্রকল্পে অর্থনৈতিক লাভের সুযোগ থাকায় বিভিন্ন নগর সংস্থা এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণে অতি আগ্রহ দেখায়। প্রাকৃতিক জলাধারগুলো নগরায়ণের চাপে এবং নগর সংস্থাগুলোর উদাসীনতায় ধ্বংস হচ্ছে। নগর এলাকায় পুকুরগুলো ভরাট হওয়ায় এলাকাভিত্তিক পানির ধারণক্ষমতা কমছে। ড্রেনেজ-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করে সময় এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। পানিনিষ্কাশনের অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকার্যকর হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ টি এম শাহজাহান রংপুর শহরের জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গে বলেন, রংপুর শহরে জনসংখ্যা বাড়ছে, শহর বিস্তৃত হচ্ছে। তবে নগর-পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেই। শহরে ড্রেনেজ-ব্যবস্থার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এই ব্যবস্থায় পানি কোথায় গিয়ে পড়বে সেই, ব্যবস্থা নেই।

আইপিডির পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে, প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এগুলোর সুফল মিলছে না। উল্টো ক্ষতির কারণ হচ্ছে। মূলত নগরের মাস্টারপ্ল্যান আমলে না নিয়ে প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই ফল উল্টো হচ্ছে।

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজালাল মিশুক, নগর-পরিকল্পনাবিদ হিশাম উদ্দিন চিশতি ও ফাহিম আহমেদ মণ্ডল।

আলোচনা সভায় নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আইপিডির পক্ষে থেকে তুলে ধরা উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হল:

১. প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনব্যবস্থাকে প্রাধান্য নিয়ে ড্রেনেজ পরিকল্পনা তৈরি করা এবং খাল-জলাশয়-জলাধারসমূহকে রক্ষা করবার পাশাপাশি ব্লু নেটওয়ার্ক এর আন্তঃ সংযোগ বৃদ্ধি করা।
২. কৃত্রিম ড্রেনেজ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা এবং পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন অবকাঠামো যেমন পাম্প, রেগুলেটর প্রভৃতির  কার্যকর ব্যবহার, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
৩. প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা এবং কৃত্রিম ড্রেনেজ অবকাঠামোর মধ্যে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য ও সমন্বয় নিশ্চিত করা।
৪. নগর পরিকল্পনা ও পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নগর সংস্থাসমূহের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের উদ্যোগ এবং বিভিন্ন ড্রেনেজ প্রকল্প ও উদ্যোগ বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।
৫. কঠিন বর্জ্যের কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
৬. খাল-জলাধার, বক্স-কার্লভাটসহ আচ্ছাদিত ড্রেনসমূহ এবং এলাকাভিত্তিক সাধারণ নালা-নর্দমা গুলোর নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং এক্ষেত্রে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।
৭. খাল ও ড্রেনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে এলাকাবাসীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা এবং খাল-নর্দমায় বর্জ্য ফেলাকে নিরুৎসাহিত করতে সামাজিক ও আইনি উদ্যোগ গ্রহণ।
৮.  ড্রেনেজ পরিকল্পনায় স্থানীয় জনগণের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে আমলে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
৯.  নগর এলাকায় ১০-১৫ ভাগ জলাশয়-জলাধার; ২৫ ভাগ সবুজ এলাকা সংরক্ষণের মৌলিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নগর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ।
১০.  নগর এলাকার ভার বহন ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব নিরূপণ করে নগর পরিকল্পনা ও ড্রেনেজ সিস্টেম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।  
 

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ

কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত ১০
২৯ এপ্রিল ২০২৪ রাত ০৯:২৯:৩০







মাভাবিপ্রবিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
২৯ এপ্রিল ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮:৫৩