তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি: আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। সাম্য, প্রেম, দ্রোহ ও গণমানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী। বাঙালির মুক্তির প্রবক্তা নজরুল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন মানুষ।
শৈশবে লড়েছেন দারিদ্র্যতার সঙ্গে আর যৌবনে শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে। অসংখ্যবার নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েও সমাজের বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের পক্ষে চালিয়ে গেছেন লেখনী। তিনি অন্যায়-অবিচার, কুসংস্কার, বৈষম্যে এবং সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার আর দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে আপসহীন। সংগীতে সৃষ্টি করেছিলেন স্বতন্ত্র ধারা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘নজরুল ভাবনা’ তুলে ধরেছেন ওমর ফারুক।
হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজী নজরুল ইসলামের অবদান উল্লেখ করতে গিয়ে ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী শারুক আহমেদ জীম বলেন,
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর কবিতা, গান ও গদ্যে ছিল সাম্য, মানবতা ও প্রতিবাদের এক দুর্বার বার্তা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মাধ্যমে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তার লেখায় একদিকে যেমন ছিল বিদ্রোহ, তেমনি ছিল প্রেম, আশা ও উদারতার ছোঁয়া। তিনি জীবনভর আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার পক্ষে।
বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অতুলনীয়—তিনি সাহিত্যকে শুধু সমৃদ্ধই করেননি, মানুষের মনেও আলোড়ন তুলেছেন। তাঁর সংগীত—‘নজরুলগীতি’ আজও মানুষকে প্রেরণা দেয়।
আমার দৃষ্টিতে নজরুল একজন চিরকালীন প্রাসঙ্গিক কবি—যিনি সাহস, ভালোবাসা ও স্বাধীনতার প্রতীক। তাঁর জীবন ও সাহিত্য আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়।
নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম উল্লেখ করে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের ২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা খান তমা বলেন, ছোটবেলার বছরের শুরুতে স্কুল থেকে নতুন বই পেলেই আনন্দে সবার প্রথমে "বাংলা বই" খুলে গল্প পড়া শুরু করে দিতাম। কিন্তু কবিতার প্রতি অতোটা টান ছিল না৷ কিন্তু আমার জীবনে প্রথম যে কবিতাটা ভীষণ নজর কেড়েছিলো তা হলো কবি কাজী নজরুল ইসলামের "নারী" কবিতাটি৷ নারীদের স্বাধীনতা, শিক্ষা ও সমতার কথা এতো সুন্দর ও শৈল্পিক রূপেও কেউ যে বর্ণনা করতে পারে এ কবিতা না পড়লে জানতাম না। এছাড়াও তিনি তাঁর "ধূমকেতু" পত্রিকায় "সন্ধ্যাপ্রদীপ" নামে মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ বিভাগ চালু করেছিলেন, যেখানে নারী শিক্ষা, অধিকার এবং অবরোধ
প্রথার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশিত হতো। ভাবা যায়! ১৮৯৯ সালে জন্মেও কতটা উন্নত-আধুনিক চিন্তা ধারার মানুষ ছিলেন তিনি। অথচ ২০২৫ সালে এসে আজও নারীকে নিয়ে সমাজের অনেক লোক কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবে নিমজ্জিত।
কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে জানলেও বিষয়টি টের পেয়েছিলাম কলেজের বাংলা বইতে থাকা "বিদ্রোহী" কবিতাটি পড়ে, যেখানে তাঁর বিদ্রোহী মনোভাব স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে৷ তিনি বরাবরই সমাজের ঘুণে ধরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং শাসনব্যবস্থা ও ধর্মের নামে বিভেদের তীব্র সমালোচনা করেছেন যা বর্তমান প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। ওনার কবিতা পড়লে আজও শরীরে এক অন্য রকম স্পৃহা কাজ করে, এক শিহরন জেগে উঠে।
আজ নজরুল জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে, শুভ জন্মদিন কবি।
কাজী নজরুল ইসলামকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী উল্লেখ করে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তাঁর স্বকীয়তা ও বৈচিত্র্য তুলে ধরেছেন। কবিতা, গল্প, নাটক, গান, প্রবন্ধ – প্রতিটি শাখাতেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। সাহিত্যকর্মে অবদানের পাশাপাশি তিনি প্রায় ৪০০০ এরও বেশি গান রচনা ও সুরারোপ করে বহুমুখী প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া কাজী নজরুল ইসলাম যেমন আত্মশক্তি, প্রতিভা ও সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ঠিক তেমনি তার দেশপ্রেমও গভীর
তিনি নজরুল ছিলেন একজন আপসহীন দেশপ্রেমিক। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরে কারাবরণ করেছিলেন তবুও তিনি আপস করেননি। কারাগারে বসেই লেখেন-‘মোরা ঝঞ্ঝার মত উন্মাদ, মোরা দুর্বার।
কাজী নজরুল ইসলাম শুধু একজন কবি বা সাহিত্যিক নন, তিনি ছিলেন এক যুগ প্রবর্তক। তাঁর সাহসিকতা, মানবিকতা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি আমাদের জাতীয় চেতনার প্রতীক। নজরুলের বিদ্রোহ ছিল মানবমুক্তির জন্য, তার প্রেম ছিল বিশ্বজনীন। যেমনটি আমরা দেখলাম যে সর্বশেষ ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ওনার লেখনী আমাদেরকে প্রেরণা যুগিয়েছে । সাহস যোগীয়েছে, স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
নারীদের সম্মানের চোখে দেখতেন কাজী নজরুল ইসলাম উল্লেখ করে ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী ফাহিম মুতারাদ্দি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অসাধারণ প্রতিভা, যিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিত। তিনি শুধু কবিতায় নয়, গান, প্রবন্ধ ও নাটকে নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। নারীদের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক ও প্রগতিশীল। তিনি নারীকে কেবল মা, বোন বা প্রেমিকা হিসেবে নয়, একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবেও দেখতেন। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে। দেশপ্রেমে উদ্ভাসিত হয়ে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। তাঁর সাহসী চিন্তা, মানবতার প্রতি ভালোবাসা এবং নারীর প্রতি সম্মান আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available