আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত পারস্পরিক শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা ১ আগস্ট শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে শতাধিক দেশ ও হাজার হাজার মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
বিভ্রান্ত ও অস্থির বাণিজ্য নীতির কারণে বেশিরভাগ কোম্পানির পক্ষেই কোনো নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনা করা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
দেশটির বাণিজ্য বিভাগ জানায়, যেসব মার্কিন প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তার ৯৭ শতাংশই ছোট ব্যবসা। এসব কোম্পানির মালিকরা নিজেদের ব্যবসা চালাতে গিয়ে ক্রমাগত পরিবর্তিত বাণিজ্য নীতির ধাক্কায় দিশেহারা, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের সরবরাহ শৃঙ্খলা ও কাস্টমস নীতির ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথন গোল্ড বলেন, কোনো নির্দিষ্ট সরবরাহকারী নতুন চুক্তি করবে কি না বা বেশি না কম শুল্কের আওতায় পড়বে কি না—তা না জানার কারণে ছোট-বড় সব খুচরা বিক্রেতা জন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা বা পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ফলে ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হতে পারেন, কিংবা চাহিদামতো পণ্যই নাও পেতে পারেন।
এই মুহূর্তে চীন বাদে বেশিরভাগ দেশের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ হারে সর্বজনীন শুল্কারোপ আছে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন ডজনখানেক দেশকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে—আগামী ১ আগস্টের আগে বাণিজ্য চুক্তি না হলে শুল্ক ৩৬ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যেমন- কম্বোডিয়া ৩৬ শতাংশ, মিয়ানমার ৪০ শতাংশ ও ব্রাজিল ৫০ শতাংশ।
বর্তমানে মাত্র ৭টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য কাঠামোতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যারা রোববার এক চুক্তিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক গ্রহণ করেছে।
সারা ওয়েলস নামের এক ব্যবসায়ী চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে তার ব্যাগ উৎপাদন কম্বোডিয়ায় সরিয়ে নেন।
কিন্তু জুলাই মাসে কম্বোডিয়াকেও যখন ৩৬ শতাংশ শুল্কের হুমকি দেওয়া হয়, তখন তিনি কম্বোডিয়ার একটি কারখানায় এক লাখ ডলারের একটি অর্ডার দিয়ে বসে আছেন।
তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করেছি যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করতে, পারিনি। চীনে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম, নীতির ধাক্কায় সেখান থেকেও পালাতে হয়েছে। এখন আবার কম্বোডিয়ায় বিনিয়োগ করেছি, কিন্তু সামনে বিশাল শুল্কের হুমকি।
তিনি আরও বলেন, মে মাস থেকেই আমি নিজের বেতন নেওয়া বন্ধ করেছি। সব অপ্রয়োজনীয় খরচ কেটে দিয়েছি। এখন হয়তো কর্মী ছাঁটাই ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। আর বড় কর্পোরেশনগুলো ওয়াশিংটনে সক্রিয় লবিং করে ট্রাম্পের ওপর প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে।
মেক্সিকোতে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের প্রধান পেদ্রো আলাত্রিস্তে বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কৌশলগতভাবে কাজ করে, কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে চায়।
ওলফার এস্টেট ভিনইয়র্ড নামের নিউইয়র্কভিত্তিক মাঝারি আকারের ওয়াইন কোম্পানি ইউরোপ, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করে। এর সিইও ম্যাক্স রন বলেন, আমরা জানি না আগামী সপ্তাহে কী ঘটবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেকোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন, দেরি করতে পারেন বা নতুন চুক্তি ঘোষণা করতে পারেন।
রন জানান, তারা ২০ হাজার বাক্স ওয়াইন আগেভাগে ইউরোপ থেকে আমদানি করছেন যাতে আগস্ট ১-এর আগেই পণ্য মার্কিন মাটিতে থাকে। এখন পর্যন্ত তারা দাম বাড়াননি, কিন্তু ভবিষ্যতে সেটা করা ছাড়া উপায় নাও থাকতে পারে।
বিভিন্ন কোম্পানি একে অপরকে জিজ্ঞেস করছে, এখন কী করা উচিত? কিন্তু কারও কাছেই নিশ্চিত উত্তর নেই।
রন বলেন, আমি যখন অন্যদের জিজ্ঞেস করি, সবাই জানি না বলে কাঁধ নাড়ায়।
সূত্র: সিএনএন
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available