লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটে পুলিশ দেখে নদীতে লাফ দিয়ে নিখোঁজের দুই দিন পর অবশেষে নদীতে ভেসে উঠলো সেই কিশোর শান্ত রায়ের (১৪) মরদেহ।
২২ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়রা সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের মেঘারাম গ্রামের ছয়মাতার ঘাট এলাকায় নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃত কিশোর শান্ত রায় পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমন্ডল গ্রামের বিনদ চন্দ্র বর্মনের ছেলে।
এর আগে ২০ জুলাই রোববার দুপুরে ওই এলাকায় নদীতে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হয় শান্ত। সোমবার দিনভর উদ্ধার অভিযান চালিয়েও কোনো সন্ধান পায়নি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার গোড়কমন্ডল থেকে মোটর সাইকেলের সিটে গাজা ফিটিং করে একটি চক্র মাদক পাচার করে লালমনিরহাটের দিকে আসতেছে। এমন একটি গোপন খবরে অভিযান চালায় লালমনিরহাট জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল। সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের মেঘারাম গ্রামে ধরলা নদীর ছয়মাতার ঘাট নামক একটি নৌ ঘাটে অবস্থান নেয় ডিবি পুলিশ। দুপুরে নৌকা ঘাটে পৌঁছামাত্র ডিবি পুলিশ মোটর সাইকেলসহ অমল চন্দ্র নামে এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করে চার কেজি গাঁজা উদ্ধার করে।
এ সময় পুলিশ দেখে শান্ত রায় নৌকা থেকে ধরলা নদীতে লাফ দিয়ে কিছু দূর সামনে উঁচু স্থানে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ সেখানে ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করলে পুনরায় নদীতে লাফ দেয় শান্ত রায়। এরপর থেকে কোনো খোঁজ মেলেনি তার। খবর পেয়ে ওই দিন রাতে ও পরদিন সোমবার দিনভর ধরলা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। দলটি তার কোনো সন্ধান মেলাতে ব্যর্থ হন।
ওই দিন গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় ডিবি পুলিশের এসআই জয়েন উদ্দিন বাদি হয়ে আটক অমল চন্দ্র ও নিখোঁজ শান্ত রায়ের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আটক অমলকে গ্রেফতার দেখানো হলেও নিখোঁজ শান্ত রায়কে পলাতক দেখায় পুলিশ।
অবশেষে মঙ্গলবার ওই স্থানে (লাফ দেয়া স্থানে) শান্ত রায়ের মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। সদর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
মৃত শান্ত রায়ের ভাই স্বপন রায় বলেন, পুলিশের তাড়া খেয়ে আমার ভাই ভয়ে নদীতে লাফ দিয়ে সাঁতার কেটে সামনে উঁচুতে ঠাঁই জীবন রক্ষার চেষ্টা করে। সেখানে একজন নারী তাকে বাঁচানোর জন্য নৌকায় এগিয়ে আসতেই পুলিশ তাকে নিষেধ করে এবং নদীতে নেমে আমার ভাইকে আটকের হুমকি দেয়। এতে ভয় পেয়ে শান্ত পুনরায় নদীতে লাফ দেয়। পুলিশ চাইলে তাকে বাঁচাতে পারত। তা না করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে তাকে ঠেলে দিয়েছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি পরিকল্পিত হত্যা।
লালমনিরহাট গোয়েন্দা (ডিবি) থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাদ আহমেদ বলেন, আমাদের হাতে আটকের আগেই শান্ত নামে অপর একজন মাদক বিক্রেতা পালিয়েছে। আমরা তাকে ধাওয়া দেইনি। মাদক উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শান্ত রায়ও পলাতক আসামি।
লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নুর নবী বলেন, নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। আপাতত অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available