• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ১২ই বৈশাখ ১৪৩১ দুপুর ১২:১০:২১ (25-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ১২ই বৈশাখ ১৪৩১ দুপুর ১২:১০:২১ (25-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

নারী কথন

খাগড়াছড়িতে ‘পিনোন-হাদি’ বিক্রি করে নারীদের ভাগ্য পরিবর্তন

২১ মার্চ ২০২৩ দুপুর ০২:৪০:৩৩

খাগড়াছড়িতে ‘পিনোন-হাদি’ বিক্রি করে নারীদের ভাগ্য পরিবর্তন

বিপ্লব তালুকদার, (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: এখন আর পিছিয়ে নেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের নারীরাও। সেই আদিকাল হতে মানব সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সংগ্রাম করে চলেছেন। তবে জীবন সংগ্রামে বেশ সাফল্য দেখা যায় চাকমা সম্প্রদায়ের আদিবাসী নারীদের ক্ষেত্রে। প্রকৃতি ও সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের অবস্থান এখন পুরুষের মতই। যা সমতলের নারীদের সঙ্গে পাহাড়ি নারীদের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের জীবন সংগ্রাম সম্পূর্ণ আলাদা ও ভিন্ন আঙ্গিকের। পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় নিজেদের সংসার সাজানোর জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে পাহাড়ি নারীরা। স্বামীর সঙ্গে দুর্গম পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ,কৃষি জমিতে চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করে সংসার চলে। অনেকে এই কঠিন কাজ থেকে সরে এসে বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন পেশা। তবুও তারা স্বামীর আয়ের উপর বসে থাকবে না। নিজে কিছু একটা  করে স্বামীকে সাহায্য করে সাজাবে তার স্বপ্নের পৃথিবীর।

পাহাড়িদের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে পরিস্থিতি, বদলাচ্ছে দিন, বদলাচ্ছে মনমানসিকতা। শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাওয়াতে অনেক পাহাড়ি নারী এখন চাকুরি থেকে শুরু করে ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। ব্যবসার টাকা দিয়ে সন্তানকে পড়া-লেখার খরচ জোগান দিচ্ছেন। তবে দেখা গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের নারীরা বেশি পরিশ্রমী।

খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হচ্ছে খাগড়াছড়ি বাজার। প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার খাগড়াছড়িতে বসে হাট বাজার। হাট বাজারের দিনে সকাল সকাল দেখা মেলে পাহাড়ি নারীদের। হাতে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ‘পিনোন-হাদি’। যেন নারীদের মিলন মেলা ঘটেছে। প্রতি হাট বাজারের দিনে পিনোন-হাদি পোষাক বিক্রি করতে আসেন পাহাড়ি নারীরা। সকাল সকাল হাতে পিনোন-হাদি নিয়ে খাগড়াছড়ি পানখাইয়াপাড়া সড়কের পাশে বসেন ‘পিনোন-হাদি’ বিক্রির বাজার।

প্রতি বৃহস্পতিবার সকালে দেখা মেলে প্রায় অনেক পাহাড়ি নারী নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পোষাক ‘পিনোন-হাদি’ বিক্রির জন্য বাজারে এসেছেন। হাট বাজারে অনেকেই এসেছেন বিয়ের জন্য নতুন পোষাক কিনতে। প্রতি হাটবাজারে এক ব্যবসায়ীর বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ সেট পিনোন হাদি। অনেকে মাত্র ৩ থেকে ৪ জোড়া পিনোন-হাদি বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে তারা সবাই নতুন ও পুরাতন ব্যবসায়ী।  

এক সেট পিনোন-হাদি বিক্রি হয় ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে পিনোন-হাদির উপর নির্ভর করে পিনোন-হাদি সেটের দাম। তবুও পিনোন-হাদি ব্যবসাটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি নারীরা। পিনোন বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। অনেকে এই ব্যবসার সাথে জড়িত প্রায় ১০ থেকে ২০ বছর। অনেকে আবার নতুন নতুন এসেছেন এই ব্যবসায়। তবে লাভজনক হওয়াতেই বেড়েছে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও।

এশিয়ান টিভি অনলাইন কথা বলেছিল জয়তী চাকমার সাথে। পেশায় তিনি একজন পিনোন-হাদি ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায় নেমেছেন ১৫ বছর আগে। বাড়ি খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুর এলাকায়। ছেলে ও মেয়ে এবং তার স্বামী নিয়ে তার স্বপ্নের পৃথিবী। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সব জায়গায় তার ঘুরা হয়েছে পিনোন-হাদি বিক্রির তাগিদে। প্রতি হাট বাজারে তিনি বিক্রি করতেন ২০ জোড়ার অধিক। যা প্রতি পিনোন সেট বিক্রি হয় ৫ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কত দামে বিক্রি হবে তা নির্ভর করে পিনোন-হাদির উপর।

মানু চাকমা নামের এক নারী ব্যাবসায়ী এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, অনেক বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। পিনোন-হাদি ব্যবসা আমাদের সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস। ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখার খরচ থেকে শুরু করে সংসারের সব খরচ এই পিনোন-হাদি ব্যবসাকে পূঁজি করেই চলছে।

এশিয়ান টিভি অনলাইন কথা বলেছিল আরও একজন পিনোন-হাদি ব্যবসায়ী সাথে। তার বাড়ি দিঘীনালা উপজেলায়। পরিবারে আছে ৮ জন সদস্য। তিনি এই ব্যবসাতে নতুন। তিনি এবারে পিনোন-হাদি সেট বিক্রি করেছেন মোট ১২ সেট। যা প্রতি পিনোন-হাদি সেট থেকে লাভ হয় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে বিভিন্ন কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মোনালিসা চাকমা।

পানখাইয়াপাড়া সড়কে এক ব্যবসায়ী এশিয়ান টিভি অনলাইন সংবাদ দাতাকে বলেন, পাহাড়ি নারীরা আগের মত আর নেই। শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাওয়াতে নারীদের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তন হয়েছে। এখন পাহাড়ি নারীরা নিজের আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। প্রতি হাট-বাজারের দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এখানে আসেন। পিনোন-হাদি বিক্রি করে এখন তারা তাদের সংসার চালাচ্ছে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ