নবজাতকের জীবন রক্ষার্থে ভূমিকা রাখছে সেভ দ্য চিল্ড্রেন’র সোয়াপ
নিজস্ব প্রতিবেদক: নবজাতকের জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনী প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে সেভ দ্য চিল্ড্রেন এর সোয়াপ প্রকল্প। আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে তিন বছরের এই সোয়াপ প্রকল্পটি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) শেষ হয় জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগিতায় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রকল্পটি, যা বাস্তবায়ন করে সেভ দ্য চিলড্রেন।সমাপ্তি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় আয়োজন করা হয় একটি ‘লার্নিং ডিসেমিনেশন ও সেলিব্রেশন’ অনুষ্ঠান, যেখানে স্বাস্থ্যখাতের সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন অংশীদারদের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।২০২২ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া সোয়াপ বা ‘সেইভিং উইমেন অ্যান্ড প্রিম্যাচিউর বেবিস’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল জটিল গর্ভাবস্থায় থাকা মা ও ছোট ও অসুস্থ নবজাতকদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ঢাকা, সিলেট ও লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসিপিএস সভাপতি ও নবজাতক স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শাহিদুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন ডা. মো. জয়নাল আবেদিন টিটো, লাইন ডিরেক্টর, হেলথ সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট। তিনি কার্যকর উদ্যোগগুলো দেশব্যাপী সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে আরও ছিলেন- ডা. মো. সোহেল হাবিব, ডা. মো. সুলতান আহমেদ, প্রফেসর মেজর (অব.) ডা. লায়লা আরজুমান বানু, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. উমর রশীদ মুনীর, প্রফেসর ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা এবং ডা. সাবিনা আশরাফী লিপি।প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনের মধ্যে ছিল বায়ু বাবল ক্রমাগত ধনাত্মক বায়ুপথ চাপ- একটি সাশ্রয়ী, পরিবহনযোগ্য ও বিদ্যুৎবিহীন প্রযুক্তি, যা নবজাতকের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এমআর খান শিশু হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতালে এর ব্যবহার হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত এই প্রযুক্তির সহায়তায় ৩০৪ নবজাতকের সফল চিকিৎসা হয়েছে।চিকিৎসকদের মতে, এই যন্ত্রের সহজ ব্যবহার, বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াও কার্যক্ষমতা ও স্থানান্তরযোগ্যতা আছে, তাই এই প্রজুক্তি উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করার সুযোগ রয়েছে। সোয়াপ প্রকল্পের আওতায় ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার ও নিওনাটাল লাইভ প্রশিক্ষণ মডেলসহ আরও বেশ কিছু হস্তক্ষেপ মায়ে ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও প্রকল্পটি কেবল চিকিৎসা সেবায় নয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত ও সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।বিএসিপিএস এর সভাপতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শাহিদুল্লাহ বলেন, আমি আমাদের বাস্তবায়ন সহযোগীদের, বিশেষ করে সেভ দ্য চিলড্রেনকে ধন্যবাদ জানাই তাদের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার জন্য- বিশেষত কম খরচে Vayu bCPAP চালুর মতো উদ্যোগে। নিওনেটাল লাইভের (এনএনএল) হ্যান্ডস-অন প্রশিক্ষণ খুবই কার্যকর হয়েছে এবং ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ারে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিষ্ঠা প্রশংসনীয়।তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই মায়েদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, কারণ সুস্থ নবজাতকের জন্য সুস্থ মা অপরিহার্য। আমি নবজাতকের স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবার টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. জয়নাল আবেদিন টিটো বলেন, আমরা অনেকদূর এগিয়েছি, আর এটি সম্ভব হয়েছে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। এখন সময় এসেছে এই কার্যকর হস্তক্ষেপগুলো উপজেলা পর্যায়ে বিস্তারের। বিশেষ করে মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সোয়াপ প্রকল্পের শিক্ষা এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমি এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এ. এস. এম. রহমত উল্লাহ বলেন, আমরা সোয়াপ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন নিয়ে গর্বিত এবং এই হস্তক্ষেপগুলোর বিস্তার নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের অর্জিত শিক্ষা ভবিষ্যতের প্রকল্প এবং স্বাস্থ্যনীতিতে ব্যবহৃত হবে।এসময় তিনি প্রধান অতিথি ও অংশীদারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের দিকনির্দেশনা ও জ্ঞানের বিনিময়ের জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানায়। সেভ দ্য চিলড্রেন দাতা যোগাযোগ এবং লজিস্টিক সহায়তার মাধ্যমে আগামীতেও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। আমি আমাদের বাস্তবায়ন সহযোগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।