• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ রাত ০১:১৮:৫৬ (21-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ রাত ০১:১৮:৫৬ (21-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

মতলব উত্তরে হারিয়ে যাচ্ছে তালের নৌকা

সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: আবহমান বাংলার খাল ও নদীতে একসময় তালের নৌকা (কোন্দা) প্রচলিত থাকলেও এখন তা কালের বিবর্তণে হারিয়ে গেছে। মেঘনার তীরবর্তী চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় একসময় দেখা মিলতো তালের নৌকার। বর্ষায় উপজেলার খাল-বিল ও জলাশয় পাড়ি দিয়ে গ্রামের এক বাড়ি  থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াতে, হাটে যেতে, বিল থেকে শাপলা তুলতে, গরুর ঘাষ সংগ্রহ থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার নিত্যদিনের কাজে ব্যবহৃত হতো তালের নৌকা।কিন্তু কালের বিবর্তণে আগের সে গ্রাম এখন আর নেই। এখন গ্রামেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে অনেক, আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে গ্রামের সড়কে। তালের নৌকার মাঝিরা এখন পরিবর্তন করেছেন নিজেদের পেশা। আর এ কারনেই আবহমান বাংলার এ বাহনটি এখন আর চোখে পড়ে না। অন্য অনেককিছুর মতই হারিয়ে গেছে কালের বিবর্তণে।কথা হয় উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মনচক এলাকার মো. শহিদুল ইসলাম খোকন ও  কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড় এলাকার ইঞ্চিনিয়ার সফিকুল ইসলামের সাথে। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে তারা জানান, একসময় আমাদের এখানকার প্রতিটি বাড়িতে একটি করে তালের নৌকা থাকতো। স্থানীয়ভাবে একে ডাকা হয় কোন্দা নামে। অনেক এলাকায় এটাকে আবার ডোঙ্গা নামেও ডাকা হয়। একসময় উপজেলার বাংলা বাজার, সটাকী বাজার, গজরা ও কালির বাজারে তালের নৌকা বেচাকেনার হাট বসতো। আমরা বড়দের সাথে হাটে গিয়ে কোন্দা বেচা-কেনা হতে দেখেছি। এখনকার ছেলেমেয়েরা তো কোন্দা কি তাই চেনে না।ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আবুল বাশার গাদ্দাফী বলেন, আমি বিলে তালের কোন্দা (নৌকা) দেখেছি, তবে কখনো এতে চড়া হয়নি।পৌরসভার জোড়খালী গ্রামের আবু সাঈদ উজ্জ্বল জানান, মতলব উত্তরে বেড়ীবাঁধ হওয়ার পরে এ অঞ্চলে নৌকার কদর কমে গেছে। আগে তাদের বাড়ির অনেকেই তালের কোন্দা (নৌকা) ব্যবহার করতেন, এখন আর নৌকা ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। নিজেও একসময় প্রতিদিন গরুর ঘাস কাটার কাজে এ কোন্দা (নৌকা) ব্যবহার করতেন বলে তিনি জানান।উপজেলার বাগানবাড়ী ইউনিয়নের খাগুরিয়া গ্রামের স্বপন মিয়া বলেন, আমি এখনও ঘাস কাটা ও বিলের মাঝখানের জমি দেখতে তালের কোন্দা (নৌকা) ব্যবহার করি। আধুনিক যুগে এসেও পুরোনোদিনের এ নৌকা চালাতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি এটা বেশ উপভোগ করি।উপজেলার শিকিরচরের সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব মো. হুমায়ুন কবির ঢালী বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তণ এসেছে। একসময় মতলব উত্তরের বিভিন্ন গ্রামে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমই ছিলো নৌকা, কিন্তু সে সময় পাল্টেছে। মেঘনা ধানাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়ীবাধ হওয়ার পর থেকে স্থানীয়ভাবে নৌকার প্রয়োজনীয়তা কমে এসেছে। সড়ক যোগাযোগে আধুনিকায়ন হয়েছে, বিকল্প যান্ত্রিকযান এসেছে, মানুষ তাতেই অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে। ফলে আবহমান বাংলার তালের কোন্দা (নৌকা) এখন তার আবেদন হারিয়ে ফেলেছে। ব্যক্তিগতভাবে দু-একজনের সংগ্রহে থাকলেও মোটাদাগে তালের কোন্দা (নৌকা) এখন বিলুপ্তির পথে।