• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ রাত ১১:১১:৩০ (20-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ রাত ১১:১১:৩০ (20-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

মতলবে বিলুপ্তির পথে খেকশিয়াল, আবাস এখন গোরস্থানে

সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর): একটা সময় দাদি-নানিরা তাদের নাতি-নাতনিদের ঘুম পাড়ানোর সময় খেকশিয়ালের গল্প শোনাতেন। সেই গল্পের চরিত্রে শিয়াল ছিল বাঙালির ‘পণ্ডিত’। গৃহপালিত না হলেও ‘শিয়াল পণ্ডিতের’ সাথে যেন বাঙালির ছিল রক্তের টান। কিন্তু নানা কারণে এই প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে।গ্রাম-গঞ্জে এখন আর খুব একটা খেকশিয়ালের দেখা মিলে না। জঙ্গল কেটে ফেলা, ঝোপঝাড় বিলীন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষবাসে অতিরিক্ত সার, কীটনাশক প্রয়োগের ফলে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে শিয়াল এখন আর আগের মতো বংশবৃদ্ধিও করতে পারছে না ।  বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী আহমেদ উল্লাহ বলেন, ‘দুই প্রজাতির শিয়ালের মধ্যে পাতি শিয়াল অনেক কষ্টে টিকে থাকলেও খেকশিয়াল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কয়েকটি কবরস্থানে এদের দেখা মিলেছে। জঙ্গল উজাড় হওয়ায় কবরস্থানের সবুজ ঘাস বিছানো মাটিতে গর্ত করে এরা নিজেদের আবাসস্থল বানিয়েছে। ’ তিনি আরও জানান, ‘কবরস্থানে এখনো ঝোপঝাড়, জঙ্গল থাকার কারণে খেকশিয়াল আশ্রয় নিয়েছে সেখানে। ’এসব গোরস্থানের আশেপাশের বাসিন্দারাও তাদের নিরাপদে বসবাস করার ব্যাপারে বেশ সচেতন । উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা, দূর্গাপুর ইউনিয়ন, বাগানবাড়ি ইউনিয়ন, ফরাজীকান্দী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গোরস্থানে বিপন্ন প্রজাতির খেকশিয়ালের দেখা মেলে। এরা ইঁদুর, মুরগি এবং সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে কৃষকের ছাগলও খেয়ে ফেলে। তবে এই এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করে খেকশিয়াল তাদের কোন ক্ষতি করে না। তাই তাদের দাবি, এসব খেকশিয়ালকে টিকিয়ে রাখার উপায় বের করা হোক।  ছেংগারচর পৌরসভার কলাকান্দা গ্রামের কেন্দ্রীয় গোরস্থানের ধার ঘেঁষে বেপারী বাড়ি। এই বাড়ির জয়নাল বেপারী (৩৫) জানান, বেশ ক’বছর ধরে এই গোরস্থানে খেকশিয়াল দেখে আসছি । এই এলাকার কেউই ওদের ক্ষতি করে না। তবে মাঝে মাঝে সাঁওতালরা তাদের শিকার করতে আসে । কিন্তু আমরা তাদের শিকার করতে দেই না।  মোহনপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুম বলেন, ‘আগে খুব দেখা যেতো শিয়াল। রাতের বেলা তাদের ডাক শুনতে ভালোই লাগতো । এখন বন, ঝোপ-ঝাড় উজাড় হওয়ায় খুব একটা চোখে পড়ে না। ইদানীং কবরস্থানগুলোতে কিছু খেকশিয়াল দেখা যাচ্ছে ।  লাল, ধুসর, বাংলা খেকশিয়ালসহ বহু প্রজাতির খেকশিয়াল দেখা যায়। এরা অত্যন্ত ধূর্ত এবং চালাক প্রাণী । প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশের উপকথায় শিয়ালের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি আইন অনুযায়ী, শিয়াল শিকার করা নিষিদ্ধ।  এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি খেকশিয়াল বছরে ৯০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ ফসল রক্ষা করে। এর ফলে কৃষকেরা লাভবান হয়। তাই ‘শিয়াল পণ্ডিতকে’ টিকিয়ে রাখতে ও তাদের বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় তথা সরকারি সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন মতলব উত্তর উপজেলাবাসী।